* দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র শনিবারসহ ৬ দিন খোলা*

ইসলামী ব্যাংক দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র * সকল প্রকার একাউন্ট খুলতে * * টাকা জমা করতে * টাকা উঠাতে * * বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স এর টাকা বোনাসসহ উঠাতে * দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রে আসুন। * * দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র শনিবারসহ ৬ দিন খোলা* * প্রয়োজনে যোগাযোগ করুনঃ 01711-458151* 01700-925241*

বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

পারভিন সুলতানাঃ একজন ফেইস বুকার ও দাঈয়াহ

 

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ২০১০/১১ এর দিকে। ফেইসবুকে পারভিন সুলতানা নাম্নি একজন মেয়ের একটা মেসেজ পাই। অনেক দরদ ও সম্মান জড়ানো কিছু আবেগ সেখানে। তিনি বুঝাতে চাইলেন পীস টিভির “ইসলামে নারীর” আলোচনা থেকে তিনি নিত্য শিখছেন। তিনি চান আমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে, যাতে দীনী কাজ করতে যেয়ে অনেক বিষয়ে আমার পরামর্শ নিয়ে বোনদের সাথে কাজ করে এগিয়ে যেতে পারেন। বয়সে তিনি আমার চেয়েও কয়েক মাসের বড়, এটা তিনি জানান দিলেন। এবং সাধারণতঃ চ্যাটে যেসব আলোচনা হয় তিনি তা থেকে দূরে অবস্থান করে আমাকে শিক্ষকের ভূমিকায় দেখতে চান তার অনুরোধ করলেন।

তার আচরণে আমি সত্যিই অভিভূত হই। আমি ফেইসবুকে দিনে অন্তত ৫০টা মেসেজ পাই, যা সবই থাকে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন। আমি যথা সম্ভব উত্তর দেই। কিন্তু আমার এই বোন টার এপ্রোচ ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন।
তিনি আমার লেখা পড়তেন, সেখানে লাল কালির দাগ দিয়ে ভুল নিয়ে আলোচনা করতেন, উত্তম ভাষা শৈলির দীর্ঘ প্রশংসা ও কিভাবে এইটাকে আয়ত্বে আনা যায় তা নিয়ে বুঝতে চাইতেন। আমিও তার এইসব আলোচনা প্রশ্রয় দিতাম। কারণ তিনি দুইটা কাজ করতেনঃ সোনার বাংলাদেশ নামক ব্লগে তিনি “সত্য লিখন” ছদ্মনামে ব্যপক লিখতেন। যার লেখা গুলো মারহুম সবুজ কবির ভাই সহ অন্যন্য ব্লগারগণ প্রশংসা করতেন। এই লেখাগুলোর অনেকটাই আমার ইডিট করতে হতো। কোন লেখা “বাজার পেলে” তিনি শুকরিয়া করতেন, এবং আমাকে জানাতেন। আরেকটা কাজে তিনি ছিলেন খুব আন্তরিক, তা হল বাংলাদেশের মধ্যে বোনদেরকে সৃষ্টিশীল লেখক হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি ছিলেন বদ্ধ পরিকর।
পারভীন আপার দুই ছেলে থাকতো লন্ডনে। দুইজন ই মাশাআল্লাহ নামাজি ও তাদের সন্তান হিসেবে পরিচয় দেয়ার মত। একবার তিনি আমার কাছে ফোন নাম্বার চাইলেন। ফোন করলেন। এবং ছেলে দুটোর জন্য গার্ডিয়ানের দ্বায়িত্ব দিলেন। তখন থেকেই তিনি আমাকে “দাদা”, অথবা “শিক্ষক দাদা” বলে ডাকতেন। একবার তিনি লন্ডন আসতে চাইলেন ছেলেদের কাছে। ছেলে মিশু আমার সাহায্য চাইল। আমি স্পন্সরশিপ দিলাম। কিন্তু তিনি আসবেন না বলে দিলেন। যখন কারণ জানতে চাইলাম, তিনি সাফ জবাব দিলেন, "দেশের যে ভয়ানক অবস্থা তাতে একবার লন্ডনে গেলে হয়ত আর বাংলাদেশে ফিরে আসা হবেনা। তখন তোমার স্পন্সরশীপের অবমাননা হবে, আর দেশে শাহাদাতী জাযবাহ নিয়ে দ্বীনী আন্দোলনের কাজে আমি আর থাকতে পারবোনা"। ছেলে মিশু আমাকে বুঝালো, আংকেল দ্বীনের ব্যাপারের আম্মা কোন কম্প্রমাইজ করবেন না। লন্ডন আসার এই সব হাতছানি তার ঈমানের কাছে কিছুই না।
তিনি লিখতেন, রাত জেগে জেগে লিখতেন। আমার বকাও শুনতেন। কারণ ওতো রাত জাগলে ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু তিনি বলতেন, দাদা, স্বামী, সন্তান, পরিবার ও সংগঠনের কাজ সেরে তাহাজ্জুদের পরে একটু লিখতে বসি। আমি চাই তোমার লেখা আমিনা কুতুব, হামিদা কুতুব ও যায়নাব গাযালিদের মত দ্বীনের দাঈয়াহ হয়ে লেখনির মাধ্যমে দ্বীনের কাজ করতে। আমাকে দিয়েও তিনি অনেক লিখিয়ে নিয়েছেন। দ্বীনের কাজে মেয়েদের অবদান বিষয়ক সমস্ত লেখাগুলো তার নির্দেশে ও আবদারে আমি সম্পন্ন করেছি। সব সময় বলতেন, দাদা, আমি লেখনীর জগতে কিছু বোনকে প্রশিক্ষিত করতে চাই, যারা হবে আমিনা কুতুব ও হামিদা কুতুবের মত সব্যসাচী। তার ওয়ালগুলো দেখলে আপনি ই বুঝতে পারবেন কত পরিচ্ছন্ন মনের ছিলেন তিনি।
একবার এমন হলো যে, দীর্ঘদিন তার কোন লেখা দেখলাম না। আমি মেসেজ দিলাম তার উত্তরও পেলাম না। পরে জানলাম কয়েকবার স্ট্রোক হয়েছে তার, তবে সুস্থ হয়েই আবার দ্বীনি দায়িত্ব পালনে ব্রতী হয়ে যান। তিনি দ্বায়িত্ব পালনে বিভিন্ন পর্যায়ে হোঁচট খেতেন, আমার কাছে কান্না ভরা মেসেজ পাঠায়ে নাসীহা নিতেন। কোন একবার বিরক্ত হয়ে বললাম, তুমি কেন দুলা ভাইয়ের কথা মেনে আপততঃ ছুটি নিয়ে বাসায় থাকছোনা। দেশের এই পরিস্থিতিতে তোমাকে গ্রেফতার করা হলে কি ভয়াবহ অবস্থা হবে ভেবে দেখছো? দুলা ভাই হাইকোর্টের নাম করা আইনজীবি। তিনি যা বলেন মেনে নাও। তিনি বললেন, দাদা, আমাদের খাদিজা (রা) কেও তো অন্তরীণ অবস্থায় থাকতে হয়, আমিও চাই দ্বীনের কাজ করতে করতে কিয়ামতে খাদীজার (রা) মুখটা দেখার যোগ্যতা অর্জন যেন করতে পারি। আমি সেদিন তার ঈমানের প্যারামিটার ধরতে পেরেছিলাম।
তার অনেক অভিযোগ ছিলো আমাদের কাজ নিয়ে। তিনি মনে করতেন, আল্লাহ আমাদের যে যোগ্যতা ও মেধা দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ দ্বীন কায়েমের আন্দোলনে লাগাচ্ছিনা। তাকে বুঝাতাম অনেক বিষয়, কিন্তু তিনি মনে করতেন দ্বীন প্রতিষ্ঠার দ্বায়িত্ব আমরা আসলেই ঠিকমত পালন করছিনা। তার এই ঝাঁকুনি আমাকে ভাবাতো।
তার বিয়ে হয় খুব ছোট বয়সে। একদম ছোট বয়সে। সে কথা তার আত্মজীবনে তিনি তুলে ধরেছেন সুন্দর ভাবে। তখন তিনি ক্লাস সিক্সে পড়তেন। দু;লাভাই আইনজীবী জনাব গিয়াসউদ্দীন মিঠু ভাই তার লেখাপড়ার প্রতি এমন দয়ালু ছিলেন যে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে তাকে অনার্স ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডুকেশনে মাস্টার্স নিতে সাহায্য করেছেন। তিনিও অত্যন্ত কৃতজ্ঞ ছিলেন স্বামীর প্রতি এই অবদানের জন্য।
সাংসারিক ভাবে তিনি ও দুলাভাই অত্যন্ত সৎ জীবন যাপন করায় ঢাকা শহরের খুব বড় ধনীদের মধ্যে ছিলেন না। কিন্তু দান ও অবদানের ক্ষেত্রে এদের দুইজনের নাম অনেক বেশি। পারভিন আপা ছিলেন একজন ব্যক্তিক্রমী দানশীলা। গত দশবছরে আমি নিজে যে সব দানের সাক্ষী তা একজন জান্নাতের পথ-রাহীর জন্যই সাজে। আমাদের বন্ধু রফিক সাঈদী যখন ইন্তেকাল করেন, আমি জানতে পারি ভাবী মারহুমা সুমাইয়া অনেক আর্থিক কষ্টে আছেন। আমি কয়দিন ঘুমাতে পারিনি এই খবর শুনে। ফোন করি পারভীন আপাকে। উনিও শুনে কেঁদে ফেললেন, বললেন, দাদা, দুয়া কর তোমার নির্দেশ যেন আমি পালন করতে পারি। পরদিন সকালে ১৭ই রামাদানে আমাকে মেসেজ দিয়ে বললেন, তোমার নির্দেশ মত ঐ বিধবা ও ইয়াতিমদের হাতে কিছু টাকা দিয়ে এসেছি, ও তে ওদের ঈদ হবে ইন শা আল্লাহ। আমি পরে খবর নিয়ে দেখলাম ঐ বছর পারভীনের ঈদ গেছে নতূন কাপড় বিহীন, এবং আনন্দহীন। তবে বুক ভরা তৃপ্তি তার, দ্বীনি কাজ করতে যেয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া মাজলুমদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছেন তিনি।
গত পরশুদিন দুলা ভাইয়ের কাছে ফোন করলাম। বললাম, আমার আপু কেমন আছেন? ভাই খুব শক্ত মানুষ। কিন্তু ডুকরে কেঁদে উঠলেন। বললেন, আব্দুস সালাম ভাই, ও মরে গেলে আমার ক্ষতি হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে শত গরীব মিসকীনদের, যাদের চোখ থাকতো পারভীনের মুখের দিকে আটকানো। কখন পারভীন তাদের হাতে কিছু না কিছু দেবেন।
আম্ফানে আমাদের সাতক্ষীরা মারাত্মক পর্যুদস্ত হয়। আমার ছোট ভাই প্রফেসর আব্দুস সামাদ জানালো ভাইয়া ঢাকা থেকে পারভীন আপা পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। এরপরে সারোয়ার ও জানালো পারভীন আপা আরো পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। আমি তাকে ফোন দিলাম। বললাম, তোমার অর্থনৈতিক অবস্থা আমি জানি। এত টাকা কোত্থেকে দিলে? দুলাভাইকে জ্বালাচ্ছো না তো। বললেন, দাদা, চিন্তা করোনা। আমেরিকা থেকে ইয়াসমিন আপা (আমার স্মৃতিতে নামটা ভুল হতেও পারে) ঈদ উপলক্ষ্যে কাপড় কিনতে টাকা দিয়েছিলেন উপহার হিসেবে। সাতক্ষীরার ভাই বোনদের এই কষ্ট দেখে আমি আর কাপড় চোপড় কিনলাম না। আমি অভিভূত হলাম।
সন্তানদের জন্য তার মায়া ছিলো অবিস্মরণীয়, ও অবর্ণনীয়। অনেক অনেক বার আমাকে তার সন্তানদের ব্যাপারে পরামর্শ চেয়েছেন। এক্ষেত্রে আমার কথা তিনি দুলাভায়ের সাথে পরামর্শ করে মেনে নেয়ার চেষ্টা করতেন। গত আগস্টের ১৭/১৮ এর দিকে ও আমাকে জ্রুরি তলব পাঠায়। তার ছেলে লিখনের কভিড১৯। মারাত্মক অবস্থা। তিনি দেখা করতে চান। কিন্তু দুলা ভাই নিষেধ করতেছেন। তিনি আমার সাথে কথা বললেন। বললেন, জীবনে তোমার দুলা ভাইয়ের মতের বাইরে যাইনি। কিন্তু ছেলেকে না দেখে পারছিনা। তুমি বলো, আমি যদি তার বিনা অনুমতিতে ছেলেকে দেখতে যাই গুনাহ হবে কিনা। আমি বললাম, হাঁ, গুনাহ হবে। এটা মারাত্মক গুনাহ। কারণ তোমার শরীরের যে অবস্থা তাতে এই ভাইরাসের কোপ সহ্য করা কঠিন হবে। দুলা ভাইয়ের কথা মেনে নাও।
গত ১০ বছরে এইবারই দেখলাম পারভীন আপা আমার পরামর্শ মানেন নি। কিংবা দুলাভায়ের নিষেধাজ্ঞাও কানে নেন নি। তিনি কোভিড ১৯ আক্রান্ত ছেলের কাছে গেছেন, জড়িয়ে ধরেছেন এবং আল্লাহর ফায়সালাতে এই মারাত্মক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এখানেই হয়েছে মাতৃস্নেহের কাছে জীবনের মায়ার অদ্ভুত পরাজয়।
যেদিন তিনি হসপিটালে যাচ্ছেন, ওইদিন বললেন, দাদা, আমি হয়ত শেষ বারের মত যাচ্ছি হাসপাতালে। অনেক জ্বালায়েছি তোমাকে, ক্ষমা করে দিও। তোমার লেখা জান্নাতি রমণীদের মত যেন হয় আমার মরণ, আর শাহাদাতের মর্যাদা যেন হয় তার দুয়া করিও। আমার সন্তানদের দিকে একটু নযর রেখ। আর ফয়সলকে বলেছি তোমাকে আমার খবর যেন দেয়। তুমি শায়খ আব্দুল কাইয়্যুমকে একটু জানায়ো। আর আমার ফেইসবুকটা হয় তুমি চালায়ো, না হয় ডিএক্টিভেট করে দিও।
আমি শুধু এতটুকুই বলতে পারলাম, আপু তুমি মোটেও দুশ্চিন্তা করোনা। আবার তুমি ফিরে আসবে ইন শা আল্লাহ। আমি দুয়া করছি। আমার আম্মা ও ভাইবোন সবাই তোমার জন্য দুয়া করবে।
আজ ফেইসবুক পাড়ায় তার মৃত্যু খবর প্রকাশ পেয়েছে। ফয়সল ও আমাকে জানায়েছে আগে। খুব কষ্ট পাচ্ছি আপু চলে যাওয়ায়। দ্বীনের পথে একজন রাহী বাংলাদেশে থেকেও যে এমন হয় আগে কোনদিন শুনিনি। তার হাতে ইসলাম মানার জযবাহ পেয়েছেন হাজারো বোন, তার লেখায় ঋদ্ধ হয়েছে হাজারো পাঠক মন। দুয়া করি এই ক্ষণজন্মা মহিয়ষী বোনকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিন, এবং শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন। মায়ের পেটের বোন না হয়েও যে এমন আপন কেও হতে পারে, তা তার সংস্পর্শে না এলে বুঝতাম না। আমার বাসায় আম্মা একজন মেয়ে হারানোর, ও ভাইবোন সবাই একজন বোন হারানোর বেদনায় কাতর হয়েছেন। আমার দুলাভাই এডভোকেট গিয়াস উদ্দীন মিঠুকে ও বাচ্চাদেরকে আল্লাহ সবর ইখতিয়ার করার তাওফীক দিন। অসুস্থ লিখনকে আল্লাহ সুস্থ করে দিন। সবাইকে তার জন্য দুয়া করবেন এই অনুরোধ।
ড. এম. আব্দুস সালামী আযাদীর টাইম লাইন থেকে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পবিত্র ঈদ-উল-আযহা’র শুভেচ্ছা.

  বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ  প্রতিবছর ঈদ আসে আমাদের জীবনে আনন্দ আর সীমাহীন প্রেম প্রীতি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে। তাই এ দিন সকল কালিমা আর কলুষতাক...