* দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র শনিবারসহ ৬ দিন খোলা*

ইসলামী ব্যাংক দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র * সকল প্রকার একাউন্ট খুলতে * * টাকা জমা করতে * টাকা উঠাতে * * বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স এর টাকা বোনাসসহ উঠাতে * দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রে আসুন। * * দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র শনিবারসহ ৬ দিন খোলা* * প্রয়োজনে যোগাযোগ করুনঃ 01711-458151* 01700-925241*

শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

সকল অবস্থায় ধর্য্য ধারণ করা

 মনে রাখবেন ..

১) যখন রক্ত সম্পর্কীয় কেউ আপনার সাথে প্রতারণা করবে ভেঙ্গে পড়বেন না। মনে রাখবেন, হযরত ইউসুফ (আঃ) আপন ভাইদের দ্বারা প্রতারিত হয়েছিলেন।
২) যখন পিতামাতা আপনার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবেন, ভেঙ্গে পড়বেন না। মনে রাখবেন, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নিজ পিতার দ্বারাই আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন।
৩) যখন ঘোর বিপদে পতিত হয়ে বের হয়ে আসার আর কোন উপয়ান্তর খুঁজে না পান, আশার শেষ আলোটুকুও দেখতে না পান, ভেঙ্গে পড়বেন না। মনে রাখবেন, হযরত ইউনুস (আঃ ) মাছের পেটের অন্ধকার প্রকোষ্ট থেকেও উদ্ধার হয়েছিলেন।
৪) যখন আপনার বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপ করা হবে আর গুজবে দুনিয়া ছড়িয়ে যাবে, ভেঙ্গে পড়বেন না, এসবে কান দিবেন না। মনে রাখবেন, হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রাঃ) এর বিরুদ্ধেও অপবাদ আরোপ করা হয়েছিল।
৫) যখন আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন, ব্যাথায় কাঁতরাতে থাকবেন, ভেঙ্গে পড়বেন না। মনে রাখবেন, হযরত আইয়ুব (আঃ) আপনার চেয়েও হাজার গুন বেশী অসুস্থ ছিলেন।
৬) যখন আপনি নির্জন/একাকীত্বে ভোগেন, ভেঙ্গে পড়বেন না। স্মরন করুন, হযরত আদম (আঃ) কে, যাকে প্রথমে একাকী সঙ্গীবিহীন সৃষ্টি করা হয়েছিল।
৭) যখন কোন যুক্তি দিয়েই আপনি কোন একটি অবস্থার পেছনের কারণ খুঁজে পাবেন না, তখন কোন প্রশ্ন ব্যতীতই স্মরণ করুন হযরত নুহ (আঃ) এর কথা। যিনি অসময়ে কিস্তি/নৌকা তৈরি করেছিলেন।
৮) যখন আপনি পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সর্বোপরি সারা দুনিয়ার দৃষ্টিতে কৌতুকের পাত্রে পরিণত হবেন, ভেঙ্গে পড়বেন না। স্মরণ করুন, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর কথা। যিনি তাঁর আপনজনের হাসি-তামাশার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রেরিত সকল পয়গম্বরগণকেই পরীক্ষায় ফেলেছিলেন এবং তাঁদেরকে উদ্ধার করেছিলেন। এজন্য যে, যাতে করে দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে পরবর্তী উন্মতেরা ধৈর্য্য ধারন করতে পারে, কষ্টসহিষ্ণু হতে পারে। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য ধারনকারীদের সাথেই আছেন’। [সুরা আনফালঃ ৪৬]

মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

বিপদ ও সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য মুমিনের রয়েছে দশটি অমোঘ অস্ত্র

 

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ বিপদ ও সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য মুমিনের রয়েছে দশটি অমোঘ অস্ত্র। যা কুরআন ও হাদীস থেকে জানা যায়।

১- সূরা আল-ফাতিহা; আর এজন্যই এ সূরার অন্য নাম হচ্ছে আল-কাফিয়া বা যথেষ্টকারী, আশ-শাফিয়া বা আরোগ্যকারী। এটি আল্লাহর গুণ হওয়ার কারণে এর দ্বারা ঝাড়ফুক করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
২- “আল্লাহ আল্লাহ রাব্বী, লা উশরিকু বিহী শাইয়ান” আল্লাহ ,আল্লাহ, তিনি আমার রব্ব, আমি তার সাথে কাউকে শরীক করি না। আবু দাঊদ, হাদীস নং ১৫২৫।
৩- “লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায যোয়ালেমীন” হে আল্লাহ আপনি ব্যতীত সত্য কোনো ইলাহ নেই, আপনি কতই না পবিত্র! আমি তো অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছি। তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫০৫।
৪- “হাসবুনাল্লাহু ওয়ানি‘মাল ওয়াকীল”। ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, আর তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক। এটা বলেছিলেন সাহাবায়ে কিরাম, তখন তারা কোনো প্রকার সমস্যা ছাড়াই প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। সূরা আলে ইমরান, ১৭৩-১৭৪।
৫- “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোনো উপায় নেই, কোনো ক্ষমতাও নেই। এটি জান্নাতের গোপন ভাণ্ডারসমূহের একটি ।
৬- “আস্তাগফিরুল্লাহ” বা আস্তাগফিরুল্লাহিল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আল-হাইয়্যুল কাইয়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি”।
৭- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আযীম আল-হালীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল ‘আরশিল আযীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদ্বি, রাব্বিল আরশিল কারীম”। (বুখারী, হাদীস নং ৬৩৪৬, মুসলিম, ২৭৩০)
৮- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী ‘আউযু বিকাল মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযুবিকা মিন দ্বাল‘য়িদ দাইনি ওয়া ক্বাহরির রিজাল’। (তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৮৪)
৯- “ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু, বিরাহমাতিকা আসতাগীসু, (ইবনুস সুন্নী, ‘আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ” হাদীস নং ৩৩৭।)
১০- আল্লাহুম্মা রাহমাতাকা আরজূ, ফালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন”, ওয়া আসলিহ লী শা‘নী কুল্লাহু, লা ইলাহা ইল্লা আনতা।” (আবু দাঊদ, হাদীস নং ৫০৯০।)

সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

ডাকছে মোয়াজ্জেম: হাবিবুর রহমান আরিফ

 

রাত পোহালো ফরজ এলো

ডাকছে মোয়াজ্জেম
ঘুমের চেয়ে সালাত বড়
কায়েম কর দ্বীন,
অজু করে কাপড় পরে
মসজিদেতে যায়
আল্লাহ্ হলেন সবার বড়
তার বড় কেউ নাই,
দিনের পরে রাত আসে ভাই
রাতের পরে দিন
সব কিছুর মালিক হলেন
রাব্বুল আলামিন,
তাওহীদের ঐ ছবক নিয়ে
আয়রে সবে আয়
মোয়াজ্জেন ডাক দিয়েছে
সময় চলে যায়,
সালাত রোজা ছেড়ে যারা
রাস্তা ঘাটে হাটে
দেখতে বাবু বড়ই চালাক
বুঝবে হাশর মাঠে,
বিচার দিনে দেখবে তারা
পাবে সেদিন সাজা
হিসেব বিনে চলে যাবে
দোজখের নিচতলা,
কাঁদার জায়গা কেঁদে যদি
নাইবা যেতে পারো
কুল পাবেনা সে জগতে
যতই কাঁদা কাঁদো,
সাপ বিচ্ছুর জ্বালারে ভাই
করবে জ্বালা পোড়া
শাস্তির শেষ নাইরে
চিন্তা করো তাই,
এখনও ভাই সময় আছে
আল্লাহ্ ডাকো
সালাত রোজা হজ্জ যাকাত
আদায় করো।

বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

প্রতিবেশীর হক

 

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আমার প্রতিবেশীর হক কি? একজন সাহাবীর এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সঃ) বললেন, 

১। প্রতিবেশী তোমার সাহায্য চাইলে তাকে সাহায্য করবে।

২। সে তোমার কাছে ধার চাইলে তাকে ধার দিবে।

৩। সে অভাবগ্রস্থ হলে তাকে সাহায্য করবে।

৪। সে অসুস্থ হলে তার শুশ্রুষা করবে।

৫। তার মৃত্যু হলে জানাজাতে যোগ দিবে।

৬। তার সুসংবাদে সন্তোষ প্রকাশ করবে।

৭। তার অনুমতি ব্যাতিত তোমার গৃহ এতা উঁচু করবেনা যাতে তার বাড়িতে বাতাস প্রবেশ করতে বাধা পায়।

৮। তাকে যন্ত্রণা দেবেনা।

৯। যদি কোন ফল ক্রয় করো তবে তাকে কিচু দেবে। যদি ন িদাও তবে গোপনে ঘরে নিয়ে যাবে এবং তোমার সন্তাদের তা বাইরে নিয়ে যেতে দিবেনা। যাতে তার সন্তানদের রাগ না জন্মায়।

-মিশকাত

সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

জীবনের গল্প : আঁধার পথ মাড়িয়ে আলোর পথে যাত্রা করা: মোশাররফ হোসাইন সাগর

 

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে বাংলা পাঠ্যবইয়ে 'বিদ্রোহী কবি' নামক একটি গল্প পড়েছিলাম। তাতে বর্ণিত হয়েছে, শ্রেণীকক্ষে একদিন শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের একটি বিষয়ে রচনা লিখতে দিয়েছেন। সবাই গদ্যে সেই রচনা লিখলেও কাজী নজরুল ইসলাম এক-ই বিষয়ে কবিতা লিখে জমা দিলেন।

শিক্ষক নজরুলের সেই কবিতা পড়ে তো অবাক। একেবারে কাব্যমানে উত্তীর্ণ সুন্দর একটি কবিতা লিখে রচনার বিষয়বস্তু নজরুল তুলে ধরেছেন।
উক্ত গল্প পড়েই মনের মাঝে সাধ জেগেছিল, আমিও কবিতা লিখে সবাইকে অবাক করে দিয়ে নজরুলের মতো একজন বিখ্যাত কবি বনে যাবো।
এছাড়া সেই সময়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে থাকা প্রতিটি ছড়া-কবিতাই ছিল সুখপাঠ্য, আনন্দদায়ক, হৃদয়গ্রাহী ও শিক্ষামূলক। যা পাঠ করে এই আমি হবু কবির (?) মন আন্দোলিত-পুলকিত হয়েছে, দু'চোখে স্বপ্নের আলপনা এঁকে দিয়েছে, মনের মাঝে কবি হওয়ার বাসনা জাগিয়ে দিয়েছে, মাথার মধ্যে ভাবনা সৃষ্টি করে দিয়েছে যে, হায়! আমিও যদি এমনি ছড়া-কবিতা লিখতে পারতাম, তবে আমার কতইনা সুনাম-সুখ্যাতি হতো!
যেই ভাবনা সেই কাজ। ১৯৭৬ সালে মাত্র চতুর্থ শ্রেণীতে অধ্যয়নকালেই লেখালেখিতে হাতেখড়ি নিলাম। তখন চারিদিকে যা দেখি তা-ই অতি সুন্দর মনোহর লাগে। মন-প্রাণ আপ্লুত হয়। মনের মাঝে ভাবের উদয় হয় :
আহা কি আনন্দ আকাশে-বাতাসে
সাথে সাথে পাখি ডাকে
কত শোভা চারি পাশে ।।.......
আমার ঠিক এই অবস্থা।
শুরুতে লিখলাম নানা বিষয়ে ছড়া, কবিতা ও গান।
শিশুমনের ভাবনার ফসল এবং অপরিপক্ব হাতে লেখা সেইসব ছড়া, কবিতা ও গান কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশ করার সুযোগ ছিল না বা সুযোগ থাকলেও কোথায় কিভাবে তা প্রকাশ করা যায় সেই বিষয়ে কোনো জ্ঞানধারণা না থাকায় তা কোথাও প্রকাশিত হয়নি। শুধু তাই নয়, উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে আমার সেই শিশুকালের সাহিত্যকর্ম কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে।
তারপরে আবার নতুন করে লেখালেখি শুরু করি ১৯৮২ সালে ঢাকায় বসে। তখন লিখতে লিখতে বিশাল এক খাতা ভরে ফেলেছিলাম। কিন্তু সেইসব লেখাও ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করতে পারিনি উপযুক্ত সুযোগের অভাবে। তবে কিছুই যে প্রকাশ পায়নি তা-ও নয়।
আমি ছিলাম একজন সিনেমাপাগল মানুষ। ১৯৭৭ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দুই শতাধিক সিনেমা দেখেছি আর নিজেকে উত্তমকুমার, রাজ্জাক, আলমগীর, বুলবুল আহমদ, ওয়াশিম ও সোহেল রানার মতো ভবিষ্যতে একজন সিনেমার 'নায়ক' ভেবে মনে মনে পুলকিত হয়েছি।
'নায়ক' হতে না পারি, সিনেমার 'পরিচালক' আমাকে হতেই হবে এভাবনা-পরিকল্পনাও মনে মনে এঁটেছি। সেইসাথে আমার ছোট দুই বোনের মধ্যে একবোন 'সাথী' খুব ভালো গান গাইতে পারতো এবং আরেক বোন 'স্মৃতি' সুন্দর নাচতে পারতো। ওদের একজনকে রুনা/সাবিনার মতো কণ্ঠশিল্পী, আরেক জনকে লায়লা হাসানের মতো নৃত্যশিল্পী বানাবো--এমন পরিকল্পনাও মনে মনে এঁটেছি।
উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নিমিত্তে সিনেমা কিভাবে তৈরি করা হয় এই বিষয়ে লেখা যত বই-পুস্তক তখনকার সময়ে বাজারে পাওয়া গিয়েছে সব কিনে গভীর মনোনিবেশ সহকারে পড়ে সিনেমা তৈরি করার বিষয়ে মোটামুটি একটা তাত্ত্বিক জ্ঞানধারণা লাভ করলাম। সেইসাথে সিনেমাজগতে কিভাবে প্রবেশ করা যায় তাই নিয়ে নানান কৌশল/পরিকল্পনা করতে লাগলাম। রাস্তা একটা পেয়েও গিয়েছিলাম। আমার বড় ভাইয়ের (সৎভাই) শ্যালক একটা মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে খলনায়ক জসিম (পরে সে নায়ক হয়ে গিয়েছিল)-এর ফাইটার গ্রুপের সদস্য হয়ে গেল। তার মাধ্যমে আমারও এ অঙ্গনে প্রবেশাধিকার লাভের একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল।
কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত উক্ত পরিকল্পনা বা সাধ-ইচ্ছে কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো এর আগে ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে মেইন গেইট দিয়ে দারোয়ান ব্যাটা ঢুকতে দেয় না বলে এফডিসির দক্ষিণ দিকের দেয়াল টপকে (সেসময়ে এফডিসির গেইট ছিল পশ্চিম দিকে এবং দক্ষিণ দিকে দেয়াল ছিল) ভিতরে প্রবেশ করেছিলাম সিনেমার শুটিং কিভাবে হয় তা দেখার জন্য।
সেদিন শুটিং দেখার সুযোগ না পেলেও নায়করাজ রাজ্জাক সাহেবের দেখা পেয়েছিলাম। দেখলাম, তিনি রংমেখে সঙসেজে বসে আছেন তার নিজের প্রযোজিত নতুন ছবি 'জোকার'-এর কোনো সিকোয়েন্সের শুটিং শুরু করার জন্য। তবে ছবির নতুন নায়িকা কাজরীর সময়জ্ঞান কম থাকায় শুটিংস্পটে যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ায় মনে হয় শুটিংয়ের কাজ শুরু করতে পারছিলেন না। কাজরী, তোমায় ধিক্কার জানাই নায়করাজ রাজ্জাককে বসিয়ে রেখে বেয়াদবী করার জন্য।
অনাহুত অবাঞ্ছিত বহিরাগত আমাকে শুটিংসেটে ঘোরাফেরা করতে দেখে এগিয়ে এলো সেটের নিরাপত্তারক্ষী। আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ভিতরে কিভাবে ঢুকেছি, কেন ঢুকেছি।
আমি তার জিজ্ঞাসার কোনো উপযুক্ত জবাব দিতে পারলাম না। শুধু থতমত খেয়ে কিসব আবোল-তাবোল বলতে লাগলাম।
হঠাৎ নিরাপত্তারক্ষী আমার গালে বিরাশি সিক্কার এক চড় মেরে বললো--'যা, এখনি বাইরে চলে যা। কোনোদিন যেন তোকে এফডিসির ভিতরে না দেখি!'
চড় খেয়ে বেরিয়ে এলাম আর মনে মনে ভাবলাম, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এফডিসির তুমি মালিক বনে গেছো শালা! আমাকে ভিতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করো, গালে চড় মারো? তোমার চেহারা মনের মাঝে গেঁথে রাখলাম। কোনো একদিন আমিও সিনেমার পরিচালক হয়ে শালা, তোমার দুই গালে লাগাবো ইচ্ছেমতো কষে দুই চড়।
আমার সিনেমার পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। হয়নি বলতে আমিই একসময় সেই পরিকল্পনা পরিত্যাগ করে অন্য রাস্তা ধরেছি। কারণ এক চমৎকার নাটকীয় ঘটনার সম্মুখীন হয়ে আমি ১৯৮৪ সালের ২০ আগস্ট নতুন করে কালেমায়ে তাইয়্যেবা-শাহাদাত পাঠ করে মুসলমান হয়ে এদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনে যোগ দিয়ে জীবনের অনেক স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা-ই আদর্শিক কারণে পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। এছাড়া গরীব-দু:খীর দু:খ-যাতনাকে পুঁজি করে সিনেমা তৈরি করে সেই গরীবের-ই পকেটের পয়সা হাতিয়ে নেয়াটাকে আমি ভালো কাজ মনে করি নাই।
১৯৮৪ সালে সিনেমার পরিচালক হওয়ার ইচ্ছেটা পরিত্যাগ করলেও সেই সময়ের আগ পর্যন্ত আমার সিনেমা দেখার নেশাটা ছাড়তে পারিনি। সেই নেশা থেকেই সিনেমার খোঁজ-খবর রাখার জন্য, যেমন কবে কোন নতুন ছবিটা মুক্তি পাবে, বর্তমানে কোন কোন ছবির শুটিং চলছে, কোন পরিচালক নতুন কী ছবির নির্মাণকাজে হাত দিয়েছেন, সেই ছবিতে নায়ক-নায়িকা হিসেবে কে কে অভিনয় করছেন ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখার জন্য তৎকালীন সময়ে প্রকাশিত দু'টি সিনে সাপ্তাহিক পত্রিকা 'চিত্রালী' ও 'পূর্ববাণী'র নিয়মিত গ্রাহক ও একনিষ্ঠ পাঠক বনে গেলাম।
এই দু'টি পত্রিকায়-ই আমি পাঠকের কলামে চিঠি লিখতাম। পাঠকদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য পূর্বাণী পত্রিকায় 'যা জানতে চেয়েছেন' নামক একটা বিভাগে যেকোনো প্রশ্ন পাঠিয়ে জবাব পাওয়া যেতো। সেই বিভাগেই কাব্যিক ছন্দে প্রশ্নাকারে ছাপার অক্ষরে সর্বপ্রথম আমার লেখা প্রকাশিত হয়।
সেই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পরে মনে আমার সে কি আনন্দ! যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছি। পত্রিকার পাতায় বারবার পড়তে থাকি নিজের প্রশ্নাকারে লেখা কবিতাটি ও তার সাথে উত্তরদার চমৎকার উত্তরটি। সেই লেখাটি স্বর্ণাক্ষরে মানসপটে অঙ্কিত হয়ে রয়েছে। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরছি। কেউ মন্দ কিছু ভাববেন না এমন আত্মপ্রচারের জন্য।
আমার জীবন বড়ই দু:খে ভরা
বড়ই যন্ত্রণাময়,
তবু পৃথিবীকে ছেড়ে যেতে
ইচ্ছে নাহি হয়।
বেঁচে থেকে যদিও হাজারো
দু:খ-জ্বালা-যন্ত্রণা পাই,
তবু পৃথিবীর বুকে চিরদিন
বেঁচে থাকতে চাই--
কেন হে উত্তরদা?"
উত্তরদাও কাব্যিক ছন্দে উত্তর দিয়েছিলেন--
কেন যে কেউ কি তা জানে,
সকলেই বেঁচে থাকতে চায়
পৃথিবীর মাঝখানে।
এটুকু বলেই টানছি ইতি--
এটাই মানবমনের স্বাভাবিক রীতি।
উক্ত প্রশ্নের উত্তরদার উত্তরে কাব্যিক ছন্দে কিংবা দার্শনিকতায় যত না খুশি হয়েছি তারও চেয়ে বেশি খুশি হয়েছি ছাপার অক্ষরে এই প্রথম নিজের লেখা পড়ে, পূর্বাণীর মতো বহুল প্রচারিত একটি পত্রিকায় নিজের নাম দেখে। শুধু তা-ই নয়, নিজের মনের গহীন কোণে লুকিয়ে থাকা দু:খ-যাতনার কথাটি একজনকে খুলে বলতে পেরেছি এবং সে বিষয়ে উত্থাপিত একটি প্রশ্নের উত্তরও তার কাছ থেকে পেয়েছি--এটা যেন লাঞ্ছিত-বঞ্চিত একটি ছেলের জন্য আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো ঘটনা।
সেই সময় আমি নিয়মিত আরও পত্রিকার গ্রাহক/পাঠক ছিলাম। তাহলো সাপ্তাহিক বিচিত্রা, সাপ্তাহিক চিত্রবাংলা, পাক্ষিক নিপুণ পত্রিকা। এসব পত্রিকায়ও নিয়মিত পাঠকের কলামে লিখতাম। তারমধ্যে কিছু লেখা ছাপা হতো আবার কিছু লেখা বর্জ্য কাগজের ঝুড়িতে ঠাঁই পেতো।
এ তো গেল যতকিঞ্চিত লেখার ও সিনেমা দেখার কথা। কিন্তু সেসময় (১৯৮৪ সাল) পর্যন্ত আমি কী কী বই-পুস্তক পড়েছি তার একটু ফিরিস্তি দেই।
* আমার বই পড়া *
আসলে হাতের নাগালে পাওয়া কোনো বই-ই পড়া আমি বাদ রাখিনি। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :
ডিটেক্টিভ সিরিজ মাসুদ রানা, জেমসবন্ড (এসব বই ছিল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লেখা। কিন্তু আমি ইঁচড়েপাকা অপ্রাপ্ত বয়সেই তা পড়েছি), দস্যু বনহুর, দস্যু বাহরাম সিরিজ, সায়েন্স ফিকশন সিরিজ কুয়াশাসহ বাংলাভাষায় অনূদিত বিদেশী অনেক বই, এপার বাংলা--ওপার বাংলার হাজার হাজার গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং কাব্যগ্রন্থ। সেইসাথে বিভিন্ন পত্রিকার ঈদসংখ্যা ও দূর্গাপূজার বিশেষ সংখ্যা কিনে পড়েছি। ডেল কার্নেগী, হার্বাট ক্যাশন ও বিদ্যুৎ মিত্রের (কাজী আনোয়ার হোসেনের ছদ্মনাম) অনেক আত্মোন্নয়নমূলক বইও পড়েছি এবং তা পাঠে অনেক উপকারও লাভ করেছি।
* আমি এত বই পেতাম কোথায় *
আমি জীবনে নতুন বই খুব কমই কিনেছি। আসলে নতুন বই কেনার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমার ছিল না। বেশির ভাগ বই কিনেছি পুরানা বইয়ের ফুটপাতের দোকান থেকে। তাতে একশত টাকার বই দশ/পনের টাকায় কিনতে পারতাম। এছাড়া ঢাকার সদরঘাটের মোড়ে ফুটপাতে কিছু দোকান ছিল যারা বই ভাড়া দিতো। যেমন একটা বই আনলে জামানত হিসেবে দশ/বিশ টাকা জমা রেখে বাসায় এনে বই পড়তে দিতো। বই পড়ে ফেরত দিলো এক/দুই টাকা ভাড়া বাবদ কেটে রেখে বাকি টাকা ফেরত দিতো। এভাবেই আমি হাজারের অধিক বই পড়েছি।
উক্ত পদ্ধতি ছাড়াও শাহবাগে গণপাঠাগারে, ইসলামী ফাউন্ডেশনের পাঠাগারে, রামকৃষ্ণ মিশন পাঠাগারে এবং সদরঘাট মোড়ে খ্রিস্টান মিশনারীদের একটি পাঠাগার ছিল সেখানে গিয়েও প্রচুর বই পড়েছি।
আমার বই পড়ার এমন নেশা ছিল যে, বই পড়তে পড়তে নাওয়া-খাওয়া এমনকি পায়খানা-প্রস্রাবের কথাও ভুলে যেতাম। বিশ/পঁচিশ ফর্মার (তিন/চারশত পৃষ্ঠার) বই একনাগাড়ে সারারাত জেগে পড়ে শেষ করে ফেলতাম।
আমি বই পড়ে জীবনে যত সময় ব্যয় করেছি সেই সময়টা যদি টাকা উপার্জনের পিছনে ব্যয় করতাম, তাহলে হয়তো অনেক আগেই কোটিপতি (আল্লাহর মেহেরবানীতে এখন আমি কোটি টাকার ব্যবসা ও সম্পদের মালিক। সেইসাথে আমার রাজকন্যা মার্কা একটা বউ আছে, তার আপেক্ষিক মূল্য এর সাথে যোগ করলে আরও এক কোটি টাকা হবে।) হয়ে যেতে পারতাম।
* আমার প্রেমে পড়া *
১৯৮২ সাল। তখন আমার বয়স সতের/আঠার। সেসময় পুরানা ঢাকার রোকনপুরে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতাম।
সেই বাড়িওয়ালার পরিবারের সাথে অল্পদিনের মধ্যেই আমাদের আপন আত্মীয়ের মতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়ে গেল। বাড়িওয়ালা আমার মাকে 'বুজি' বলে ডাকতেন, তার স্ত্রী 'আপা' এবং ছেলে-মেয়েরা 'খালাম্মা' বলতো। আর আমার ছোট ভাই-বোনেরা আমাকে যেহেতু 'দাদা' বলতো সেহেতু বাড়িওয়ালার ছেলে-মেয়েরাও আমাকে 'দাদা' বলে ডাকতো।
আমরাও বাড়িওয়ালাকে 'খালুজান', বাড়িওয়ালীকে 'খালাম্মা' বলে ডাকতাম। সেইসাথে আমার সিনেমা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে বেশ জানা-শোনা এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান থাকায় বাড়িওয়ালা-বাড়িওয়ালীসহ তাদের সব ছেলে-মেয়ে আমার একান্ত ভক্ত অনুরাগী হয়ে গেল। ফলে বাড়িওয়ালার ঘরে ভালো-মন্দ কিছু রান্নাবান্না করা হলে তার থেকে একটা অংশ আমার জন্য বরাদ্দ হয়ে যেতো।
বাড়িওয়ালার পরিবারের সাথে আমাদের সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল যে, তারা একবার আমাদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল।
সেই বাড়িওয়ালার একটি মাত্র মেয়ে এবং দু'টি ছেলে ছিল। মেয়েটিই বড় এবং বয়স বারো/তেরো। নাম 'শায়লা পারভীন' (ছদ্মনাম)। গায়ের রঙ তেমন পরিষ্কার নয়। চেহারাও আহামরি কিছু নয়। তবু আমি সেই মেয়েটির-ই প্রেমে পড়ে মজনু হয়ে প্রেমসাগরে হাবুডুবু খেতে লাগলাম।
কেন এমনটি হলো! কারণটি বলছি।
প্রেমে পড়ার একটা উপলক্ষ লাগে। আমার বেলায় সেই উপলক্ষটি হলো :
কোনো এক আত্মীয়ের বিয়ের 'গায়ে হলুদ' অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য শায়লা একদিন বাসন্তি রঙের শাড়ি পরে সাজগোছ করেছে। এমন অবস্থায় আমি তাকে দেখতে পেলাম। আমার নিকট তখন শায়লাকে বেহেশত হতে নেমে আসা ডানাকাটা এক হুরপরী মনে হলো। সেদিন-ই আমি ওর প্রেমে পড়ে গেলাম এবং প্রেমসাগরের কূল-কিনারা হারিয়ে অকূলে ভাসতে লাগলাম।
প্রেমে তো পড়েছি, কিন্তু তা প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছি না। কারণ সেই সময়ে আমি তেমন প্রতিষ্ঠিত ছিলাম না। নিম্নপর্যায়ের একটা কাজ করতাম। সেহেতু আমি নিম্নশ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। এই পর্যায় থেকে একজন বাড়িওয়ালার মেয়ের প্রেমে পড়া সামাজিক দৃষ্টিতে রীতিমতো অপরাধ হিসেবে গণ্য।
সমাজ যা-ই মনে করুক--
মন যারে চায়/তারে কি ভুলিতে পারি লোকের-ই কথায়!
প্রেমে চায় না রাজার রাজ্য, হিন্দু কিবা মুসলমান
যার জন্য যার কান্দেরে পরান।
অথবা
যার নয়নে যারে লাগে ভালো
যার দিলে যার দিল হারালো
বয়সকালে দিওয়ানা হলে
লোকের কথায় কি আসে যায় বলো ।। ........
আমার হয়েছিল সেই অবস্থা। প্রেমের সে কি যাতনা! তা আবার যদি হয় একতরফা, প্রকাশ করতে না পারা যায়, তাহলে দু:খের কোনো সীমা থাকে না। আমারও দু:খ-যাতনার কোনো সীমা-পরিসীমা ছিল না। সেই কাহিনী নিয়ে পরবর্তীতে আমার তৃতীয় উপন্যাস 'বঞ্চিতের বেদনা' রচিত হয়েছে।
প্রেমের যাতনায় দেওয়ানা হয়ে তখন আমি 'নীড়হারা প্রেমিক পাখি' নামে একটি কবিতা লিখলাম :
আমি এক নীড়হারা অশান্ত প্রেমিক পাখি
প্রেমে পড়ে নীড় হারিয়ে সারাক্ষণ উড়তে থাকি।
প্রেম দিয়ে বিনিময়ে প্রিয়ার প্রেম পেতে
প্রেমময় ছোট্ট একটি সুখের নীড় বাঁধতে
দু'টি ডানায় ভর করে সাথী হয়ে বাতাসের
উড়ে যাই কত প্রান্তে সীমাহীন অনন্ত আকাশের।......
লিখলাম একটি বিরহবেদনার গান :
আমার হৃদয়-জ্বালা আমি বলবো না তো আর
হৃদয়-মাঝে লুকিয়ে রাখবো সকল ব্যথা ভার
জ্বালা বলবো না তো আর ।।
মনে আমার ছিল আশা
তোমায় নিয়ে বাঁধবো বাসা
মিটবে আমার প্রেমপিপাসা
উপায় নেই তা পূর্ণ হবার
জ্বালা বলবো না তো আর ।।
প্রেম করিলে সইতে হয় যে
অনেক দু:খ-জ্বালা
তাই কি তুমি পরিবে না
গলে প্রেমের মালা
দু:খে যাহার জীবন গড়া
উচিত নয় তার প্রেমে পড়া
সাজে না তার প্রেম করা
নেই যে তাহার প্রেমাধিকার
জ্বালা বলবো না তো আর ।।
আগেই উল্লেখ করেছি, আমি ১৯৮৪ সালে এদেশের সববৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনে যোগ দিয়েছি। সেই সংগঠনে যোগ দেয়ার পরেই আমার জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা সব উল্টে-পাল্টে গেল। আমার কেবলা মস্কো-পিকিং, ওয়াশিংটন ছেড়ে মক্কার দিকে ঘুরে গেল। আমার সিনেমা দেখার নেশা কেটে যায় এবং চিত্রপরিচালক হওয়ার পরিকল্পনাও পরিত্যক্ত হয়। পাঠ্য বিষয়বস্তুরও পরিবর্তন হয়ে পাঠ্যতালিকায় যোগ হলো ইসলামী সাহিত্য, হাদিস এবং কুরআনের তাফসীরগ্রন্থের বাংলা অনুবাদ বিশেষকরে 'ইসলাম বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনবিধান', 'ইসলাম পরিচিতি', 'ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা', আল-জিহাদ, সীরাতে সরওয়ারে আলম, খেলাফত ও রাজতন্ত্র, রাসায়েল ও মাসায়েল, ভ্রান্তির বেড়াজালে ইসলাম, ইসলামী সমাজ বিপ্লবের ধারা, ইসলামী সমাজ দর্শন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব, হাদিসের আলোকে মানবজীবন, এন্তেখাবে হাদিস, রাহে আমল ও রিয়াদুস সালেহীন এবং তাফহীমুল কুরআনসহ অগণিত ইসলামী গ্রন্থ। বিনোদনমূলক সাহিত্য হিসেবে যোগ হলো নসীম হিজাযী ও শফীউদ্দীন সরদারের ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলো। এর সাথে কয়েক বছর পরে যোগ হয় আবুল আসাদের অনন্য সৃষ্টি সাইমুম সিরিজ। এসব গ্রন্থ পড়ে আমার চিন্তা-চেতনা সম্পূর্ণ পাল্টে গেল। লেখাঝোকাও সাময়িকভাবে থেমে গেল। মন থেকে প্রেমরোগেরও আরোগ্য হয়ে গেল। সেইসাথে আমি তখন ইসলামী আন্দোলনের জানবাজ কর্মী হয়ে গেলাম।
* আমার মরহুমা মায়ের কথা *
আমি খুব ছোটবেলায় অনিয়মিতভাবে নামায পড়লেও এবং দু'চারটি রমযানের রোযা পালন করলেও ১৯৭৭ সালে ঢাকায় এসে স্থায়ী বসত গড়ার পরে হাজার হাজার বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠের সাথে বানরদের গুরুঠাকুর চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদসহ কমিউনিজমের উপর লেখা অনেক গ্রন্থ পড়ে, এর সাথে আমার এক কমিউনিস্ট মামার প্ররোচনায় আমি আল্লাহর অস্তিত্বে সন্দিহান হয়ে প্রায় 'নাস্তিক' হয়ে গিয়েছিলাম।
ইসলামী আন্দোলনে যোগদানের পরে আমার নাস্তিক্য রোগ সেরে যাওয়ায় এবং নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায় আদায় ও কুরআন-হাদিস অধ্যয়ন করতে দেখে সবচেয়ে বেশি খুশি হলেন আমার গর্ভধারিণী মা।
সেই সময় দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন বিশ্বপ্রেমিক, কবি ও গীতিকার হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদ সাহেব। তিনি জনগণের রায়ে নয়, বন্দুকের জোরে রাজসিংহাসনে আরোহণ করায় দেশের সকল রাজনৈতিক দল একজোট হয়ে তাকে সিংহাসন থেকে নামানোর জন্য আন্দোলন শুরু করে দিলো।
আমার যোগ দেয়া ইসলামী রাজনৈতিক দলটিও সেই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। সেহেতু আমাকে প্রায়-ই মিছিল-মিটিংয়ে যেতে হতো। হরতাল পালনে পিকেটিংয়ে অংশ নিতে হতো। তখন কোনো কোনোদিন পুলিশের লাঠিপেটা খেয়ে শরীরে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে বাসায় ফিরতাম।
আমি ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনে যোগ দিয়ে নতুন করে মুসলমান হওয়ায় মা আমার পরম খুশি হলেও মিছিল-মিটিংয়ে যেয়ে. হরতাল পালন করতে ও করাতে গিয়ে পুলিশের পিটুনি খেয়ে বাড়ি ফেরায় সেই মা-ই আমার প্রতি চরম নাখোশ হলেন।
স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার পক্ষে কুরআন-হাদিস থেকে যতই দলিল পেশ করি মা আমার তাতে সন্তুষ্ট হন না। বলেন--'এটা তোর দায়িত্ব নয়। তোর নুন আনতে পান্তা ফুরায়, আর তুই কিনা যাস রাজনীতি করতে! বাদ দে এসব। এগুলো বড়লোকের কাজ।'
মাকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে ভিন্ন পণ্থা অবলম্বন করলাম এবং তাতে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে সফলকাম হলাম।
ভিন্ন পন্থাটি হলো, সাইমুম ও পাঞ্জেরী শিল্পীগোষ্ঠীর গাওয়া বিভিন্ন গানের ক্যাসেট কিনে এনে বাজিয়ে মাকে শোনালাম।
ব্যাস। কেল্লা ফতেহ হয়ে গেল। মাকে এতদিন আমি শত চেষ্টা করেও যে ইসলামী আন্দোলনের প্রযোজনীয়তা, গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হইনি, ইসলামী সংগীত শুনে মা তা সব বুঝে ফেললেন এবং শেষে তিনি নিজেই আমাদের দলের মহিলা শাখায় যোগদান করে অত্যন্ত সক্রিয় একজন কর্মী/দায়িত্বশীলা হয়ে গেলেন। সেইসাথে আমার ছোট তিন বোনও ইসলামী ছাত্রীসংগঠনে যোগ দিলো এবং একসময় তারা বড় দায়িত্বশীলা হয়ে আমাদের বাসাকে তাদের থানা শাখার অফিসে পরিণত করলো।
আমার মাকে সবচেয়ে প্রভাবিত করেছে মরহুম মতিউর রহমান মল্লিক ভাইয়ের লেখা কয়েকটি গান। যেমন--
আমাকে দাও সে ঈমান আল্লাহ মেহেরবান
যে ঈমান ফাঁসির মঞ্চে অসংকোচে গায় জীবনের গান ।।......
এখনো মানুষ মরে পথের ধারে
এখনো আসেনি সুখ ঘরে ঘরে
কি করে তাহলে তুমি নিবে বিশ্রাম
কি করে তাহলে ছেড়ে দিবে সংগ্রাম ।। ........
ঈমানের দাবি যদি কুরবানী হয়
সে দাবি পূরণে আমি তৈরি থাকি যেন
ওগো দয়াময়
হে আমার প্রভু দয়াময় ।।.......
দাও খোদা দাও হেথায় পূর্ণ ইসলামী সমাজ
রাশেদার যুগ দাও ফিরায়ে দাও কুরআনের রাজ ।। .......
আম্মা বলেন ঘর ছেড়ে তুই যাসনে ছেলে আর
আমি বলি খোদার পথে হোকনা জীবন পার ।।
আল-কুরআনের আহবানে মা
ঘর ছেড়ে কি বাহির হবো না .......
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে যালিমের কারাগারে মিথ্যা মামলায় বন্দী কু্রআনের পাখির একটি উক্তি মনে পড়ে গেল।
তিনি চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক তাফসীরুল কুরআন মাহফিলে একবার বলেছিলেন--'আমার তিন ঘণ্টা ওয়াজ করা আর সাইমুমের একটা গান একসমান।'
কুরআনের পাখির কথার বাস্তব প্রমাণ আমি হাতেনাতে পেয়েছি। এমনটি হয়তো আরও অনেকের বেলায়-ই ঘটেছে। তাই তো আমি নিজেও কিছু গান লেখার চেষ্টা করেছি। যার মধ্যে--
খোলাফায়ে রাশেদার সোনালী দিন
কেন যে ফিরে আর আসে না
সকলে পেয়ে তার অধিকার
কেন যে প্রাণ খুলে হাসে না ।। .......
গানটি এখন মুখে মুখে ফেরে এবং অনেক ওয়ায়েজীন গানটি গেয়ে ওয়াজ করে থাকেন।
* নতুন করে লেখালেখি শুরু করা *
আমার পূর্বের লেখা ছিল অনৈসলামী চিন্তা-চেতনার ফসল। তাই ইসলামী আন্দোলনে যোগদান করে লেখা থামিয়ে দিয়ে দীর্ঘ আট বছরব্যাপী ইসলামকে অধ্যয়ন করে ভালোভাবে ইসলামী নীতি-আদর্শ জানার চেষ্টা করেছি। শেষে ১৯৮৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাইয়াত হওয়ার শপথ 'ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়াহইয়াহ ওয়া মামাতি লিল্লাহি রব্বিল আলামিন'--কু্রআনের এই আয়াত পড়ে আল্লাহর রাস্তায় জীবন কুরবানী করে দেয়ার শপথ নিয়ে লিখলাম ব্যাপক জনপ্রিয় আমার সেই বিখ্যাত কবিতা :
আমার গানের-ই সুর কবিতার ছন্দ
সুখ-দুখ আর বিষাদ-আনন্দ
সব তোমার-ই জন্য খোদা, সব তোমার-ই জন্য ।
আমার বেঁচে থাকা আর মৃত্যুবরণ
ক্লান্তি-বিশ্রাম আর নিদ্রা-জাগরণ
তোমার তরে বিলিয়ে দিয়ে হই যেন ধন্য, ওগো ধন্য ।।
আমার আশা আর যত স্বপ্ন দেখা
কাগজের বুকে আঁচড়, কলমের রেখা
হয় যেন শুধু তোমার দ্বীন কায়েমে সাধনা, শুধু সাধনা ।
শহীদ হই যদি প্রাণ বিলিয়ে
বেঁচে থাকি যদি গাজী হয়ে
সদায় যেন হয় শুধু তোমার খুশি কামনা, শুধু খুশি কামনা ।।
আমার প্রেম আর ভালোবাসা
হিংসা করা আর প্রতিহিংসা
সব-ই যেন হয় তোমার দ্বীনের তরে, শুধু দ্বীনের তরে ।
দু'হাত তুলে খোদা তোমার কাছে
এ-ই শুধু মোর চাওয়ার আছে
দাও খোদা আশা পূর্ণ করে, দাও এ আশা পূর্ণ করে ।।
এটুকু লিখেই থেমে ছিলাম। এ কবিতাটি ছাপার জন্যও তখন কোথাও প্রেরণ করিনি।
তার বছর দু'য়েক পরে এদেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের লোকদের স্বাধীনতাবিরোধী ও রাজাকারসহ নানা অভিধায় অভিষিক্ত করে নির্মূল করার জন্য 'র'-এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও সাহায্যে 'ঘাদানি কমিটি' গঠিত হলো। আর তখন-ই আমার কলম ঝলসে উঠলো। তার প্রথম প্রয়াস হিসেবে 'দৈনিক সংগ্রাম' পত্রিকার পাঠকের কলামে 'রেডিও-টিভি কি সরকার ও রামবামপন্থীদের পৈতৃক সম্পত্তি?' শিরোনামের দীর্ঘ এক চিঠি লিখলাম।
চিঠিটির কোনোরূপ সংযোজন-বিয়োজন ছাড়াই অতি গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হলো। পরিচিত যারা লেখাটি পড়েছেন তারা সবাই আমার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন।
এর কয়েক মাস পরে আরেকটি রাজনৈতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে সাপ্তাহিক 'সোনার বাংলা' পত্রিকার উপসম্পাদকীয় কলামে লিখলাম 'সোজা আঙ্গুলে ঘি ওঠে না?' শিরোনামের একটি নিবন্ধ।
অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এই লেখাটিও ছাপা হলো এবং পরিচিত যারা লেখাটি পড়েছেন তারা সবাই আমার পিঠ চাপড়ে বাহবা/উৎসাহ দিয়ে লেখা চালিয়ে যেতে বললেন। বিশেষকরে ইনকিলাব পত্রিকায় চাকরিরত কবি আব্দুল বাতেন আমাকে নানা পরামর্শ এবং অবিরতভাবে লিখে যাওয়ার অনুরোধ জানালেন।
এরপর একদিন তৎকালীন মুনাফিক সরকার আমাদের দলের প্রধানকে অন্যায়ভাবে কারাবন্দী করলে লিখলাম দেশব্যাপী সাড়াজাগানো আমার প্রথম রম্যরচনার পুস্তক 'রাজাকার শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ'।
উক্ত পুস্তকের জনপ্রিয়তায় উজ্জীবিত হয়ে লিখলাম একে একে আরও তিনটি রম্যরচনার বই।
সবগুলো বই-ই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তারপরে ইসলামী ছাত্রী-আন্দোলনের একবোনের সংগ্রামী জীবনের বাস্তব কাহিনীকে কেন্দ্র করে লিখি একটি অডিও নাটক 'বিজয়িনী সুলতানা'। এ নাটকটিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
এরপরে নাটকের প্রকাশকের অনুরোধে লিখি উক্ত নাটকের দ্বিতীয় খণ্ড 'জান্নাতের যাত্রী'। এর মধ্যে আমার লেখা একক গান নিয়ে প্রকাশিত হয় প্রথম গানের অ্যালবাম 'সাগরের প্যারোডী গান-১'। এই অ্যালবামটি সুপারহিট হয়। এই অ্যালবামের-ই একটি গান ছিল--
খোলাফায়ে রাশেদার সোনালী দিন
কেন যে ফিরে আর আসে না
সকলে পেয়ে তার অধিকার
কেন যে প্রাণ খুলে হাসে না।
* আমার উপন্যাস লেখা *
আমার রম্যরচনার বই, নাটক ও গানের ক্যাসেটের ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখে বাংলাবাজারের একজন প্রকাশক আমাকে উপন্যাস লেখার পরামর্শ দিলেন।
সেই পরামর্শের আলোকেই প্রথমে দু'টি ইসলামী উপন্যাস 'নাস্তিকের মেয়ে' এবং 'অবুঝ হৃদয়' লিখি এবং একসাথেই উপন্যাসদু'টি প্রকাশিত হলে সারাদেশের ইসলামী সাহিত্য পাঠকদের মধ্যে অভাবনীয় সাড়া জাগে। যার ফলে মাত্র চার/পাঁচ মাসের মধ্যে প্রথম মুদ্রণের তিন হাজার করে বই বিক্রি হয়ে যায় এবং দ্বিতীয় মুদ্রণ করতে হয়।
এরপরে লিখি 'বঞ্চিতের বেদনা', 'আঁধার পেরিয়ে', 'রাজ্য ও রাজকন্যা' এবং 'সোনালী স্বপ্নের নীল যন্ত্রণা' নামক আরও চারটি উপন্যাস। অন্য আরও বেশকিছু বইও লিখেছি।
* পাঠক/পাঠিকাদের উপর আমার লেখা উপন্যাসের প্রভাব *
আমার প্রথম চারটি উপন্যাস ছিল ইসলামী আদর্শ এবং ইসলামী আন্দোলনকে উপজীব্য করে নৈতিকতার সীমারেখায় থেকে প্রেমের উপাখ্যান। তাই আমার উপন্যাস পাঠ করে অনেক ছেলে নামাযী হয়েছে, ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।
অন্যদিকে মেয়েরা হয়েছে পর্দানশীন দ্বীনদার নামাযী এবং ইসলামী ছাত্রী-আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। এসব কথা পাঠক-পাঠিকারাই পত্র লিখে আমাকে জানাতো।
বিপরীতে উল্টো চিত্রও আছে। সেটাই একটু পড়ে তুলে ধরবো।
* একজন মমতা ভাবীর কথা *
আমার ফুপাতো-চাচাতো অনেকগুলো ভাবীর মধ্যে একজন শিক্ষিত ভাবী ছিলেন। তিনি ফুপাতো ভাইয়ের স্ত্রী। পাকিস্তান আমলের মেট্রিক পাস। আমার ফুপাতো ভাই আব্দুল মজিদ মৃধা সুদর্শন ও সুকণ্ঠের অধিকারী এবং ভারতফেরত একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ৭২ সালে দেশে অনেক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ হতো। মজিদ ভাই সড়কপথে রিকসার হুডের উপর ও হ্যান্ডেলের সাথে এবং নৌপথে নৌকার ছইয়ের উপর মাইক বেঁধে মাইকিং করে সেই সভা-সমাবেশের খবর প্রচার করতেন।
তিনি কতক্ষণ 'ভাইসব, ভাইসব!' করে গলা ফাটিয়ে গলাকে একটু বিশ্রাম দিতে বা দেশের জনগণকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে সুমধুর কণ্ঠে সেই সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি দেশাত্মবোধক গান ধরতেন :
সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা
সোনা নয় তত খাঁটি বলো যত খাঁটি
তারচেয়ে খাঁটি বাংলাদেশের মাটিরে
আমার বাংলাদেশের মাটি
আমার জন্মভূমির মাটি।।
গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী আব্দুল লতিফের কথা ও সুরে অমর সৃষ্টি এই গানটি মজিদ ভাইয়ের কণ্ঠে শুনেই 'মমতা' নামের একটি মেয়ে তার প্রেমে 'লাইলী' বনে যান এবং আর্থিকভাবে মজিদ ভাইয়ের থেকে অনেক বেশি সামর্থ্যবান পরিবারের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তার গলায় বরণমালা পরিয়ে আমার 'ভাবী' হয়ে যান।
সেই ভাবীর সাথে আমার একটু বেশিই ঘনিষ্ঠতা ছিল। কারণ ভাবী ছিলেন অত্যন্ত সুন্দরী এবং আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারী। একেবারে সিনেমার নায়িকাদের মতো। আর সাধারণত: দেবররা ভাবীদের অনেকটা 'নেওটা' হয়ে যায়। ভাবী সুন্দরী হলে তো কথা-ই নেই। আমিও তাদের অন্তভুর্ক্ত হয়ে তার 'নেওটা' হয়ে গিয়েছিলাম।
তবে আমিই কি শুধু তার নেওটা হয়েছিলাম? ভাবী কি অন্যদের চেয়ে আমাকে একটু বেশিই আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন না?
কারণটা কী আমি বললাম না। নিজের রূপ-সৌন্দর্যের গুণকীর্তন নিজের-ই মুখে কী করে করি? লজ্জা-শরমের ব্যাপার। আপনারা যে যার মতো কল্পনা করে নিন। তবে খারাপ কিছু কল্পনা করে বসবেন না যেন। মায়ের দেয়া তথ্যমতে ১৯৬৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসে আমার জন্ম। তাই ১৯৭২ সালে আমার বয়স কত ছিল তা ক্যালকুলেটর দিয়ে হিসাব-নিকাশ করে বের করুন।
১৯৯৫ সালে একসাথে যখন আমার দু'টি উপন্যাস প্রকাশ হলো তার কয়েক মাস পরে একটি প্রয়োজনীয় কাজে গ্রামের বাড়িতে গেলাম। সাথেকরে উপন্যাসের কয়েকটি কপি নিয়ে গিয়েছিলাম। যেয়েই আমার প্রিয় এবং ভাবীদের মধ্যে আমার সবচেয়ে সমঝদার সেই ভাবীর সাথে দেখা করলাম এবং অতিগর্বের সাথে স্বরচিত দু'টি উপন্যাস তার হাতে তুলে দিলাম।
আমি ভেবেছিলাম, ভাবী তার গুণধর দেবর উপন্যাস লিখে সাহিত্যিকের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছে এ দেখে খুশিতে বাগবাগ হবেন এবং এই কৃতিত্বের জন্য আমায় বাহবা দিবেন, অভিনন্দন জানিয়ে সাহিত্যচর্চায় উৎসাহ-অনুপ্রেরণা যোগাবেন। মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করবেন--'বেঁচে থাকো বৎস।'
কিন্তু না, ফল হলো উল্টো। ভাবী নিজে আমার ভাইয়ের প্রেমে পড়ে 'লাইলী' হয়ে তাকে বিয়ে করলেও উপন্যাসদু'টি হাতে নিয়ে কয়েকটা পাতা উল্টে-পাল্টে দেখে আমার উদ্দেশ্যে ভর্ৎসনা করে বললেন--'প্রিয় দেবর মহাশয়, তুমি প্রেমের উপন্যাস লিখেছো, না? তোমরা এই লেখক/কবিরাই যত সর্বনাশের মূল। প্রেমের কবিতা লিখে, প্রেমের উপন্যাস রচনা করে যুববয়সী ছেলে-মেয়েদের প্রেম শিক্ষা দাও, প্রেমের দীক্ষা দাও। একেক জনকে লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েট বানিয়ে ছেড়ে দাও। তোমাদের এসব কবিতা-উপন্যাস পড়েই ছেলে-মেয়েরা বিশেষকরে কলেজ-ইউভার্সিটিতে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যার-তার সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। তাদের সেই অসম সম্পর্ক পিতা-মাতা মেনে না নেয়ায় ফলশ্রুতিতে তাদের প্রেমের সফল পরিণতি ঘটে না। আর তখন-ই তারা বিরহের আগুনে জ্বলে-পুড়ে রাগে-অভিমানে আত্মহত্যা করে তাকে নিয়ে পিতা-মাতার সব স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়। শোকসাগরে ভাসিয়ে পিতা-মাতাকেও মানসিকভাবে সারাজীবনের জন্য পাগলপ্রায় বানিয়ে রেখে যায়।'
উক্ত কথাগুলা বলার সাথে সাথে অসম প্রেমের সফল পরিণতি না ঘটায় আমাদের নিকটবর্তী এক গ্রামের একটি মেয়ের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার করুণ কাহিনীও আমার উদ্দেশ্যে তুলে ধরলেন।
ভাবীর বর্ণিত ঘটনাটি শুনে মনের মাঝে আমার গভীরভাবে রেখাপাত করলো। এছাড়া ঢাকায় আমাদের মহল্লায় অনুরূপ এক মর্মান্তিক ঘটনার আমিও প্রত্যক্ষদর্শী। তা বলতে গেলে লেখার কলেবর বেড়ে যাবে বিধায় সেই চেষ্টায় ক্ষান্ত দিলাম।
* সুনীল গঙ্গোপাধ্যয়ের কথা *
আমার ভাবীর কথার প্রেক্ষিতে মনে পড়ে গেল ওপার বাংলার লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা একটি উপন্যাসের কথা। সেই উপন্যাসটির নাম মনে নেই। কারণ তিনি শতাধিক উপন্যাস লিখেছেন, আমিও তারমধ্যে অধিকাংশ পড়েছি।কিন্তু এত বইয়ের নাম মনে রাখা কি সম্ভব?
যা-ই হোক, সেই উপন্যাসে বর্ণিত ঘটনার খানিকটা তুলে ধরছি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যা লিখেছেন তার সারমর্ম :
কলেজ/ইউনিভারসিটিতে পড়ুয়া এক মেয়ে তার চেয়ে জাতপাতে নিচুস্তরের এক ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চাচ্ছে। কিন্তু হিন্দুদের মধ্যে ছেলে-মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে জাত-বংশকে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করা হয়। সমগোত্রীয় না হলে বৈবাহিক সম্পর্ক করে না। সেহেতু সেই মেয়ের অসম প্রেমের সম্পর্ক পিতা-মাতা মেনে নিতে পারছেন না। তাই মেয়ে একদিন মাকে বলছে--'তোমরা আমার ইচ্ছেটাকে মেনে নিবে, না হলে আমার বিয়ের কাজে তোমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে নিজেই নিজের বিয়ের কাজ সেরে নিবো।'
মেয়ের কথা শুনে অত্যন্ত আক্ষেপ ও মনোবেদনার সুরে মা বলেন--'হ্যাঁ, এখন তো তোমার পাখা গজিয়েছে। তোমাকে আমরা লালন-পালন করাসহ লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করে তুললাম। তোমাকে নিয়ে আমাদের কত স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা ছিল। ছিল মনের মাঝে কত আশা, তোমাকে বিয়ে দিবো আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নেমতন্ন করে মহাধুমধাম ও আনন্দোৎসব করে। আমাদের সেই স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা, মনের ইচ্ছা-আশা সব ধূলোয় মিশিয়ে দিয়ে তুমি এখন নিজের বিয়ে নিজেই করে নিবে। তা-ও আবার আমাদের চেয়ে জাত-বংশে নিচুস্তরের এক ছেলেকে তুমি বিয়ে করবে!'
উক্ত ঘটনাবলি ছাড়াও আরেকটা বিষয় প্রত্যক্ষ করলাম। আমিসহ আরও কতিপয় লেখকের লেখা ইসলামী উপন্যাস পড়ে সমাজে একটা ইসলামীধারার প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা চালু হয়ে গেছে। যেসব দ্বীনদার ছেলে-মেয়ে একসময় প্রেম-প্রীতিকে নাজায়েয মনে করতো তারাই আমাদের উপন্যাস পড়ে প্রেমের বৈধতা পেয়ে গেল এবং চুটিয়ে প্রেম করা শুরু করলো। নিজের এক বোনও তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে একজন প্রেমিকা বনে গেল।
অন্যদিকে আমার প্রেমেও অনেক পাঠিকা হাবুডুবু খেয়ে আমাকে না পাওয়ার বিরহে কাতর হয়ে পাগলিনীপ্রায় হয়ে যেতে লাগলো।
রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে রামবামপন্থী ইসলামদ্রোহীদের রামধোলাই দিয়ে চারটি রম্যরচনার বই লেখার কারণে ওদের হিটলিস্টে আমার নাম উঠে গিয়েছিল। সেহেতু জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে আমার কোনো উপন্যাসে লেখক পরিচিতি এবং নিজের ছবি দেইনি। তা সত্ত্বেও অনেক পাঠিকা প্রথমে আমার লেখা উপন্যাসের প্রশংসা করে প্রকাশনীর ঠিকানায় চিঠিপত্র লিখে আমার সাথে যোগাযোগের সূত্রপাত ঘটায়। তারপরে ইনিয়ে বিনিয়ে প্রেমনিবেদন এবং 'আমাকে জীবনসাথী হিসেবে না পেলে তারা বাঁচবে না' বলে জানিয়ে পত্র লিখে আমাকে দুর্বল করার চেষ্টা করতে লাগলো।
আমাকে নিয়ে একজন পাঠিকার 'তুমি যদি' শিরোনামে লেখা একটা কবিতা নিম্নে তুলে ধরলাম :
তুমি যদি-
সুদূর আকাশের নিহারিকা হতে
আমি জ্যোতির্বিদ হয়ে দেখতাম প্রতিরাতে,
বলতাম কিছু একান্ত কথা।
তুমি যদি-
বাগানের গোলাপ হতে
আমি মালী হয়ে পানি দিতাম
তোমার চরণে।
তুমি যদি-
পাহাড়ী ঝরনা হতে
আমি উন্মুক্ত হয়ে ভিজতাম
তোমার জলে।
তুমি যদি-
প্রকৃতির ঘাস হতে
আমি শিশির হয়ে ঝরে পড়তাম
তোমার উপরে।
তুমি যদি-
নীল আকাশে জোছনার চাঁদ হতে
আমি জীবনপথিক হয়ে খুঁজে নিতাম
জীবনের পথ।
তুমি যদি-
কলকণ্ঠ হতে
আমি যুগ যুগ কাটিয়ে দিতাম
তোমার কণ্ঠ শুনে শুনে।
তুমি যদি-
আকাশের মেঘ হতে
আমি ফসল হয়ে বসে থাকতাম
তোমার বর্ষণের প্রতীক্ষায়।
ইতি-
আপনার গুণমুগ্ধ ভক্ত পাঠিকা 'স্বর্ণলতা'
এমনি ধরনের অনেক কবিতা সংবলিত প্রেমপত্র।
আমি তখন কী করবো? এতসব প্রেমিকার মধ্যে হয়তো এক জনকে আমার জীবনসঙ্গিনী করতে পারবো। আর বাকিদের কী হবে? তারা কি আমার বিরহবেদনায় আত্মহত্যা করবে কিংবা পাগলিনী হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মরবে?
নিজেকে তখন মহা-অপরাধী মনে হতে লাগলো। কেন আমি প্রেমকে উপজীব্য করে উপন্যাস লিখতে গেলাম! এখন যদি কোনো মেয়ে আমার প্রেমে পাগল হয়ে আত্মহত্যা করে বসে তার দায়ভার কে নিবে? তাই নিজেকেই নিজে বললাম, সাগর, থামো। তোমার কলম বন্ধ করো। লিখতেই যদি হয় অন্যকিছু লেখো।
কিন্তু কী বিষয় নিয়ে লিখবো? অবশ্য সেসময়ে উপন্যাস ছাড়া আরও কিছু গ্রন্থ রচনা করেছিলাম। যেমন--
'আল্লাহর তরবারি খালিদ বিন ওয়ালিদ' (জীবনী), 'সোনালী দিনের সত্য কাহিনী' (কিশোরগল্প), 'ঘোড়ায় চড়ে সাগর পাড়ি' (কিশোর উপন্যাস)। সম্পাদনা করেছি 'সুখময় দাম্পত্য জীবন', ইসলামী গানের সংকলন 'নবতরঙ্গ' ও 'চেতনা' নামের তিনটি গ্রন্থ।
এসব ছোট-খাটো লেখাঝোকায় পেট চলে না। তাই একসময় নিজের লেখায় খেমা দিয়ে অন্যের লেখা বইয়ের প্রুফ দেখাসহ সম্পাদনা/পরিমার্জনার কাজ শুরু করলাম। সম্পাদনা করলাম বিসিএস গাইডসহ কলেজ/ইউনিভারসিটির ভর্তিগাইড, সরকারী/বেসরকারী চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষার গাইড। এসব কাজ করতে গিয়েও নানা অনৈতিকতার সম্মুখীন হয়ে পড়লাম। তাহলো খেটেখুটে কষ্টসৃষ্ট করে আমি একটা গ্রন্থের জন্ম দিলাম। কিন্তু গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে দেখি জন্মদাতার নয়, অন্য একজনের নামে সেটা প্রকাশিত হয়েছে।
যেমন বিসিএস গাইডে নাম ব্যবহার করা হতো কোনো অবসরপ্রাপ্ত সরকারী বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তার। এমনিভাবে যে গ্রন্থটিই আমি সম্পাদনা করি তা প্রকাশিত হয় কলেজ/ইউনিভারসিটির শিক্ষকের নামে, নয়তো সরকারী কোনো কর্মকর্তার নামে।
আবার ইসলামী গ্রন্থ সম্পাদনা করলেও তার লেখক/সম্পাদক হিসেবে কোনো খ্যাতিমান আলেমের নাম ব্যবহার করা হয়। অবশ্য সম্পাদনার জন্য ন্যায্য পারিশ্রমিক আমাকে দেয়া হতো। কিন্তু আমার সম্পাদিত গ্রন্থ অন্যের নামে প্রকাশ করা একটি মিথ্যাচার। আর এর অংশীদার হওয়া বা দায়ভার পরোক্ষভাবে আমার কাঁধেও বর্তায়। তাই একসময় এই মিথ্যাচারের কর্মযজ্ঞেও ক্ষান্ত দিলাম।
* অবশেষে লেখালেখি ছেড়ে দেয়া *
ফিরে যাই পূর্বকথনে। প্রেমের উপন্যাস লেখার ফলাফল কী তা আগেই তুলে ধরেছি। সেই প্রেক্ষিতে আমি ভেবে দেখলাম, এ তো মহাসর্বনাইশ্যা কাণ্ড ঘটতে চলেছে! আমার লেখা উপন্যাস পড়ে কেউ প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার খেলা খেলতে গিয়ে একটা পর্যায়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডও ঘটিয়ে ফেলতে পারে এবং তার দায়ভার আমার কাঁধেও বর্তাবে। ফলে এর জন্য পরকালে আল্লাহর দরবারে আমাকে কঠিন জবাবদিহী করতে হবে।
আল্লাহর দরবারে এ ব্যাপারে আমি কী জবাব দিতে পারবো! জবাব দেয়ার/সাফাই গাওয়ার কোনোই সুযোগ থাকবে না। পরিণতি চরম ও কঠিন শাস্তির জাহান্নামবাস। দুনিয়াতে এক সেকেন্ডের জন্যও অগ্নিবাস করতে পারি না। কারো পক্ষেই তা করা সম্ভব নয়। আর অনন্ত অসীমকাল ধরে জাহান্নামের অগ্নিবাস! তা কী করে পারবো ও সইবো? সেই ভয়ে এবং আরও বিবিধ কারণে চাকরি থেকে অকাল অবসর গ্রহণের মতো আমিও সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে দিলাম।
আমি অকাল অবসর গ্রহণ করায় আমার সারাদেশে হাজার হাজার পাঠক-পাঠিকা থাকা সত্ত্বেও তারা একসময় আমাকে ভুলে গেল এবং একজন প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক হওয়ার পরেও এখন আর কেউ আমায় চেনে না। এমনকি প্রয়োজনে নিজের পরিচয় তুলে ধরলেও কেউ আর তা বিশ্বাস করতে চায় না।
* এদেশে প্রেম-ভালোবাসার ব্যাপক প্রচলন কিভাবে হয় *
প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে বাঙালী নারী-পুরুষের খ্যাতি আছে সারাবিশ্বব্যাপী। তারা এমনিতেই ছিল 'নাচনে বুড়ি', তার উপর 'ঢোলের বাড়ি' দিলেন শফিক রেহমান। তিনি ছিলেন সাপ্তাহিক 'যায়যায়দিন' পত্রিকার সম্পাদক। তিনি এই পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেই ১৪ ফেব্রুয়ারী 'ভ্যালেন্টাইন' দিবসকে এদেশে আমদানি করেন এবং সেদিনটাকে 'ভালোবাসা' দিবস হিসেবে সারাদেশে ছড়িয়ে দেন, প্রতিষ্ঠা করেন।
বর্তমানে শফিক রেহমান কারাগারে অন্তরীণ থাকলেও তার প্রচলনকৃত ১৪ ফেব্রুয়ারী 'ভালোবাসা দিবস' পালিত হচ্ছে অতি সাড়াম্বরে। এদিন উপলক্ষে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার বিশেষ 'ভালোবাসা' সংখ্যা প্রকাশিত হয়, টিভি চ্যানেলগুলোতে বিশেষ নাটক প্রচারিত হয়। প্রেমিক-প্রেমিকারা বিয়ে করার জন্যও এদিনটাকে বেছে নেয়।
জগন্নাথ কলেজের কীর্তিমান প্রিন্সিপাল মরহুম সাইদুর রহমান সাহেবের গুণধর পুত্র শফিক রেহমানের বপনকৃত বিষবৃক্ষের বিষময় ফল এদেশে ইসলামী সমাজব্যবস্থা কায়েম না হলে এ জাতি ভোগ করবে কিয়ামত পর্যন্ত।
উপসংহার : প্রেম-ভালোবাসা সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন
গল্প-উপন্যাস পড়ে কিংবা নাটক-সিনেমা দেখে মানুষে প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রতি যতই দরদ ও সহানুভূতি প্রকাশ করুক না কেন, বাস্তবে প্রেমিক-প্রেমিকার প্রতি কেউ বিন্দুমাত্র সহানুভূতি পোষণ করে না। এমনকি যেসব পিতা-মাতা নিজেরা প্রেম করে ঘর বেঁধেছে তারাও নিজেদের ছেলে-মেয়ের প্রেম করাকে ভালো চোখে দেখে না। বরং তাদের প্রতি তাচ্ছিল্য ও ঘৃণা-ই প্রকাশ করে থাকে। এর কারণ হয়তো এই যে, গল্প-উপন্যাসে, সিনেমা-নাটকে প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোলাগা-ভালোবাসার আবেগ-অনুভূতির একটা ধারাবাহিক বর্ণনা থাকে। থাকে তাদের হৃদয়ের অন্তর্নিহিত ভাবধারার সপক্ষে ইতিবাচক উপস্থাপনা।
এছাড়া মনে মনে প্রতিটা নারী-পুরুষই একজন করে লাইলী-মজনু। গল্প-উপন্যাসের ও সিনেমা-নাটকের নায়ক-নায়িকার প্রেম-ভালোবাসার মাধ্যমে তাদের অবচেতন মনে লুকিয়ে থাকা প্রেমের-ই প্রতিফলন বা বহি:প্রকাশ দেখতে পায়। ফলে সবাই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। কামনা করে তাদের প্রেম-ভালোবাসার সফলতা।
কিন্তু বাস্তবে চোখের সামনে সংঘটিত প্রেম-ভালোবাসার ঘটনায় অনুরূপ উপস্থাপনা থাকে না। মানুষে প্রেমিক-প্রেমিকার আবেগ-অনুভূতির কথা, হৃদয়ের পবিত্র ভাবধারার খবর জানার সুযোগ পায় না। যতটুকু জানে তা ঘটনা পরম্পরা থেকে বিছিন্ন খাপছাড়া অবস্থার কিছু অংশ। ফলে স্বাভাবিকভাবে মানুষ তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়ে উল্টো বিরূপ হয়ে যায়।
* শেষ কথা *
আমার আরও অনেক কথা বলার ছিল, লেখার ছিল, কিন্তু বলতে/লিখতে পারলাম না। কারণ আমরা ইসলামপন্থীরা রাজনৈতিকভাবে বর্তমানে বৈরী সময় অতিক্রম করছি। এমতাবস্থায় অনেক কথাই বলা যায় না, লেখা যায় না। আমিও মন খুলে মুক্ত কণ্ঠে অনেক কিছু লিখতে পারলাম না। যা লিখলাম 'ধরি মাছ, না ছুঁই পানি' কৌশল অবলম্বন করে আকার-ইংগিতে। সেহেতু আমার লেখা পড়ে কারো মনে কোনো প্রশ্নের উদয় হলে বা আরও কিছু জানার থাকলে আমার ইনবক্সে আসতে পারেন। সেখানে যার যা-কিছু প্রশ্ন আছে, জানার আছে নি:সংকোচে লিখে পাঠান। আমি চেষ্টা করবো সব প্রশ্নের জবাব দিতে, সব জানার অবসান ঘটাতে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে বৈরী সময় থেকে উত্তরণের তাওফীক দান করুন। আমীন!
০২. ০২. ২১

পবিত্র ঈদ-উল-আযহা’র শুভেচ্ছা.

  বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ  প্রতিবছর ঈদ আসে আমাদের জীবনে আনন্দ আর সীমাহীন প্রেম প্রীতি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে। তাই এ দিন সকল কালিমা আর কলুষতাক...