* দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র শনিবারসহ ৬ দিন খোলা*

ইসলামী ব্যাংক দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র * সকল প্রকার একাউন্ট খুলতে * * টাকা জমা করতে * টাকা উঠাতে * * বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স এর টাকা বোনাসসহ উঠাতে * দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রে আসুন। * * দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র শনিবারসহ ৬ দিন খোলা* * প্রয়োজনে যোগাযোগ করুনঃ 01711-458151* 01700-925241*

বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২০

ঝড়ঃ নইম কাদের

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আজ ভয়াল ২৯এপ্রিল। ১৯৯১সালেল এদিনে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলকার রউপর দিয়ে বয়ে যায় ইতিহাসের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। এতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। আমার বাড়ি ককসবাজারের বদরখালী হওয়ায় আমি খুব কাছে থেকে উপলব্ধি করেছি ধ্বংসের সেই তাণ্ডব।
৯১ এর ঘূর্ণিঝড় আমার মনে এতটা দাগ কেটেছে যে, আমি এখনো তা মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি।সেই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসকে আশ্রয় করে আমার লেখা গল্প ‘ঝড়’।
গল্পটি ২৫ এপ্রিল ২০১৪, দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছিল।কয়েকজনের অনুরোধে পুনরায় পোস্ট করলাম।

আজ-কাল সবাই খুব ব্যস্ত। কারো কোন ফুরসৎ নেই। বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা হলে সময়ের কথা উঠলেই সবার এক কথা ‘না, হাতে একদম সময় নেই।’ যান্ত্রিক সভ্যতা মানুষকে এভাবেই ব্যস্ত করে ফেলেছে। এত ব্যস্ততা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে আবার এমনও হয় যে, সময় কাটে না। যেমন আজ আমার হল। ছুটির দিন। দুপুরে খেয়ে বিছানায় কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করলাম। ঘুম দূরে থাক, তন্দ্রার সাক্ষাৎও মিলল না। অগত্যা বেরিয়ে পড়লাম ইরফানের উদ্দেশ্যে। অনেক দিন তার দেখা নেই। অবশ্য এ সময় তাকে পাবার সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকা, দশ নম্বর রোডে তাদের বাসা।
যা ভেবেছিলাম তাই হল। না, ইরফানকে পাওয়া গেল না। ইরফান ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়েছে দু’বছর হল। এখনো বেকার। বেকার হলে কি হবে, রাত বারটার আগে কিংবা সকাল সাতটার পরে তাকে কখনো বাসায় পাওয়া যায় না। আসলে বেকারদের কাজ সর্বদা একটু বেশি।
ফুটপাত ধরে হাঁটতে লাগলাম। আশ্বিনের রৌদ্রোজ্জ্বল বিকেলে হাঁটতে বেশ ভালই লাগছে। হাঁটতে হাঁটতে বিপ্লব উদ্যানে যখন পৌঁছি, ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে পাঁচটার ঘর অতিক্রম করেছে। পার্কের দিকে তাকিয়ে মনে হল অনেক দিন শুধু নয়, অনেক মাস কোন পার্কে বসা হয়নি। ঢুকে পড়লাম ভেতরে। চার দিকে বার দু’এক চক্কর লাগালাম। একটি বেঞ্চও খালি নেই। সব জোড়ায় জোড়ায় টিনএজদের দখলে। ঘাসের উপর বসা আরো অনেকে। মাঝখানে ফোয়ারার পাশে দাঁড়িয়ে চারদিকে একবার চোখ বুলালাম। এ সময় এখানে একমাত্র আমিই বে-জোড়। নিজের তারুণ্যের উপর বড় বেশি আক্ষেপ হল। বাদামওয়ালাকে কয়েকবার ডাকতে হল। সেও বারবার যুগলদের কাছে যেতে চায়। কিছু বাদাম নিয়ে একপাশে বসে বসে চিবুলাম। তারপর একসময় আস্তে আস্তে পার্ক থেকে বেরিয়ে আসি।
শেখ ফরিদ মার্কেটের সামনে গিয়ে শহর এলাকার বাসের জন্য দাঁড়ালাম। এমন সময় রিক্সায় বসা এক ভদ্র মহিলার সাথে চোখাচোখি হল। লাল বাতি জ্বলায় রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে।
পিয়ারু। পুরো নাম হাসনাতুননেছা, ডাকনাম পিয়ারু। তার সাথে আজ আমার প্রথম সাক্ষাৎ না হলেও এটা ছিল একেবারে অপ্রত্যাশিত। আমি চমকে উঠ্লাম। আশ্চর্য! সেও আমাকে চিনে ফেলেছে। তাড়াতাড়ি রিক্সা থেকে নেমে কাছে এসে বলল- আরে মাসুদ ভাই আপনি? অনেক দিন পর দেখা। কেমন আছেন?
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল- সব কথা শুনব। তবে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নয়, বাসায় গিয়ে। এইতো সামনে রেল লাইন পেরিয়ে একটু গেলেই বাসা। চলুন। সে রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে বিদায় করে দিল। দু’জন হাঁটতে হাঁটতে চললাম।

পিয়ারুর সাথে আমার প্রথম দেখা বিয়ের আনন্দঘন পরিবেশে। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আকরামের বাড়ি ছিল কক্সবাজারের বদরখালী গ্রামে। ২৮ এপ্রিল ’৯১, তার বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বিয়েতে আমার অনেক দায়িত্ব ছিল। দু’দিন আগেই চলে গেলাম বদরখালী। চমৎকার গ্রাম। পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের শাখা মহেশখালী নদী, পূর্বে-দক্ষিণে চকরিয়া সুন্দর বন। মাঝখানে ব-আকৃতির সমতল গ্রামটি দেখে মনে পড়ে যায় ছোট বেলায় পড়া কবিতা- ‘আমাদের গ্রামখানি ছবির মতন’।
গ্রামের মানুষগুলো যেমন সরল, তেমনি উদার। শহর থেকে এসেছি শুনে যেদিকে যাই পাড়ার বুড়োরা পর্যন্ত জোর করে ঘরে নিয়ে যান। শহরে এমন হৃদ্যতাপূর্ণ আতিথিয়েতা অকল্পনীয়।
আটাশ তারিখ দুপুরে আকরামের বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের আসরেই মনে মনে ঈর্ষান্বিত হলাম আকরামের সৌভাগ্যের প্রতি। মা-বাবার পছন্দ করা বধূ হাসনাতুননেছা পিয়ারু চমৎকার মেয়ে। চকরিয়া কলেজ থেকে ডিগ্রি পরীক্ষা দিয়েছে, এখনো রেজাল্ট বেরোয়নি।

বিয়ের পরদিন চট্টগ্রাম চলে আসতে চেয়েছিলাম। বন্ধুরা সবাই চলে আসলেও আমি আকরামের অনুরোধ উপেক্ষা করে চলে আসতে পারিনি। এদিকে সকাল থেকে বার বার রেডিও-টেলিভিশনে আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিন প্রচার হচ্ছিল। ক্রমশ বাড়ছে বিপদ সংকেতের সংখ্যা। তারপর দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম।
সন্ধ্যায় সবাই আরমানদের পুরাতন আমলের মাটির তৈরি সৌখিন দ্বিতল ঘরে জড়ো হয়ে গল্প-গুজবে মশগুল হয়ে গেল। ছোট বড় সবার মাঝে বিয়ের আনন্দ। ছোটরা ছুটাছুটি হৈ-হুলোড় করছে আর বড়রা বেয়াই বাড়ির গল্পে মত্ত।
রেডিওতে আবহাওয়ার বিশেষ সংবাদ শুনে আমরা কয়েকজন মাত্র উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। কি আশ্চর্য! দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত শুনেও লোকজনের মাঝে তেমন প্রতিক্রিয়াই লক্ষ্য করলাম না। শিশু-বুড়ো সবাই খোশ গল্পে বিভোর। বেশ জমে উঠেছে বিয়ে পরবর্তী আসর। বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে ভয়ে ভেতরে ভেতরে আমার অবস্থা খুবই কাহিল।
এক সময় আকরাম আমাকে ঘরের ভেতরে তার রুমে ডেকে নেয়। এই প্রথম পিয়ারুকে সাধারণ বেশে দেখার সুযোগ হল। বই-এ পড়া ‘গ্রাম্য বধূর’ সবকিছুই পিয়ারুর মাঝে পরিলক্ষিত হল। আমাকে দেখে হাসতে হাসতে বলল- মাসুদ ভাই, এতক্ষণে বুঝি আমার খবর নেয়ার সুযোগ হল।
হাসিতে মুক্তা ঝরে শুনেছি। জীবনে আমি কখনো মুক্তা দেখিনি। ঝকঝকে দু’পাটি দাঁতের ক্ষিয়দাংশ প্রকাশ করা পিয়ারুর যে হাসি আজ আমি এই অজ পাড়া গাঁয়ে এসে দেখলাম, বাকী জীবন মুক্তা না দেখলেও আক্ষেপ থাকবে না। আমি পরিপার্শ্বিক সব ভুলে গিয়ে অসভ্যের মত হা করে চেয়ে রইলাম।
সে আবারো হাসতে হাসতে বলল- মাসুদ ভাই, এত কি ভাবছেন বলেনতো। আবহাওয়ার সংবাদ শুনে ভয় পেলেন নাকি?
পিয়ারুর কথায় তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম- দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত চলছে। শহরের ছেলে আমি। শহরে বসে কালবৈশাখির ঝড় দেখেছি, কখনো প্লাবণ দেখিনি। সত্যি সত্যি যদি বিশ ফুট পানি হয়, কী যে অবস্থা হবে! বাসায় সবাই চিন্তায় থাকবেন।
আমার চিন্তাক্লিষ্ট মলিন চেহারা দেখে তার খুব মায়া হল। আমায় সান্ত্বনা দিয়ে বলল- ‘মাসুদ ভাই, অত ভাববেন না তো। দেখবেন কিছুই হবে না। আর কপালে যদি সত্যিই মৃত্যু লেখা থাকে, সবাই একসাথে মরবো কি বলেন?’ বলেই সে আবার হেসে উঠল। আকরামও তাতে যোগ দিয়ে হাসতে হাসতে বলল- বড় পিয়ার করে পিয়ারু নামক একটি মেয়েকে মাত্র গতকাল বিয়ে করলাম। আর আজ অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে হৃদয়ের পিয়ার মাথায় উঠবে। না, পানি যতই বাড়ুক আমি কিন্তু পিয়ারুকে মাথায় নিতে পারব না, বড়জোর কাঁধে নিতে পারি, মাসুদ তুই কি বলিস্?

আকরাম এমনভাবে রসিয়ে রসিয়ে কথাগুলো বলল যে, আমরা তিনজনই একসাথে হেসে উঠলাম।
শুরু হয়ে গেল ঝড়। মড় মড় শব্দে ভেংগে পড়তে লাগল গাছপালা। টিনের চাল উড়ে গেছে বাতাসের প্রথম ধাক্কায়। ঢেউ এর আঘাতে এক সময় ঝ্যাঁৎ করে ভেংগে পড়ল বারান্দার দেয়াল। আমাদের অপেক্ষা করতে বলে আকরাম বাইরে গিয়ে লোকজনদের এদিক সেদিক কিছু ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে। দ্রুত বাড়তে থাকল পানি। উপায়ন্তর না দেখে আকরাম পানির স্রোতে ভেসে আসা গাছ, চাল ইত্যাদির উপর যাকে যেভাবে পারে জোর করে তুলে দিতে লাগল। বিয়ে উপলক্ষে আসা নারী আর শিশুদের সেকি বুক ফাটা কান্না! কিন্তু ঝড়ের তাণ্ডব আর পানির স্রোতের গর্জন তাদের সেই কান্নার রোল আল্লাহর আরশ পর্যন্ত পৌঁছতে দিয়েছে কি না বুঝতে পারলাম না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আকরাম ফিরে আসে। ততক্ষণে পানি ঘরের ভেতরে কোমর সমান হয়ে গেছে। যে কোন সময় ভেতরের দেয়াল ভেংগে পড়তে পারে। তাই আমরা বারান্দায় গিয়ে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়ালাম। বারান্দায় আমরা মাত্র তিনজন- আমি, আকরাম এবং পিয়ারু। তিনজনই নির্বাক। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এই মুহূর্তে কী যে করব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। হঠাৎ আকরাম দু’কদম এগিয়ে আমার কাঁধে হাত রেখে ধরা গলায় বলল-‘মাসুদ, শহর থেকে আসা বন্ধুরা সবাই সকালে চলে গেছে। পিয়ারুর বাড়ি থেকে যারা এসেছিল আবহাওয়া খারাপ দেখে বিকেলে তারাও চলে গেছে। শুধু তোকে যেতে দেই নি। নিজের উপর এখন আমার বড় আক্ষেপ হচ্ছে কেন তোকে যেতে না দিয়ে জোর করে রেখে দিলাম। তোর উপর আজ আমি এ কী অধিকার খাটালাম।
একটু থেমে আকরাম আবার বলতে লাগল- বন্ধু, ধ্বংসের যে তাণ্ডব শুরু হয়ে গেছে, জানি না আমাদের কার কী অবস্থা হয়... সে আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু ততক্ষণে বিশাল এক ঢেউয়ের আঘাতে বারান্দার দেয়াল ভেংগে যায় এবং আমরা বাইরে সিটকে পড়ি।
অন্ধকারে পানিতে হাবুডুবু খেতে খেতে অনুভব করলাম কেউ একজন আমাকে আঁকড়ে ধরে আছে। বুঝতে বাকী রইল না কে সে। পিয়ারু। আল্লাহর শুকরিয়া যে, ভাসতে ভাসতে আমরা বড় গাছের সাথে আটকে যাওয়া ঘরের ভাঙগা একটি চাল পেয়ে যাই। অতি কষ্টে পিয়ারুকে চালে তুলে এক হাতে পিয়ারুকে অন্য হাতে চাল ধরে সারারাত পানির ভেতরে কাটালাম। আমাদের উপর দিয়েই চলে গেল ধ্বংসের সেই ভয়াবহ তাণ্ডব।
শেষ রাতের দিকে ঝড়ের গতি কমে আসে। সেই সাথে আস্তে আস্তে কমতে থাকে পানি। আশ্চর্য! এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা একটি কথাও বলিনি। ভোরের আলো ফুটে উঠলে নিজের অসংলগ্ন কাপড়-চোপড় যতটা সম্ভব সামলিয়ে পিয়ারু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে প্রশ্ন করল- আকরাম কোথায়?
আমি কোন জবাব না দিয়ে চাল থেকে তাকে নামিয়ে আকরামদের বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম। পানি কোথাও কোমর সমান, কোথাও বুক সমান। কোথাও আরো বেশি। বুঝতেও পারিনি যে, গত রাতে পানির স্রোতে আমরা প্রায় আধ মাইল দূরে ভেসে চলে গিয়েছিলাম। অনেক কষ্টে আকরামদের বাড়িতে এসে দেখি ভিটে-মাটির চিহ্ন পর্যন্ত নেই। কাউকে যদি বলা হয় গত সন্ধ্যায় এখানে মাটির একটি সৌখিন দ্বিতল বাড়ি ছিল, বাইরে বধূ-বরণ লেখা সুন্দর একটি গেইট ছিল। মাত্র দু দিন আগে এখানে বসেছিল বিয়ের এক জমজমাট আসর। কেউ এসব বিশ্বাস করবে না। ঘরের নীরব সাক্ষি হিসেবে ডাল-পালা বিহীন কয়েকটি ভাঙা গাছ এদিক সেদিক ছিটিয়ে ছড়িয়ে আছে মাত্র।
ভাংগা একটি গাছের গোড়ায় গিয়ে পিয়ারু বসল। কি করব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। গত রাত থেকে কিছুই পেটে পড়েনি। তার সাথে শরীরের উপর দিয়ে বয়ে গেছে নানা ধকল। কিন্তু নির্বাক পিয়ারুর মুখের দিকে তাকিয়ে ক্ষুধা আর কষ্টের পরিবর্তে অন্য এক ভয় এসে ভর করল আমার উপর। হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টিকারী মুক্তো ঝরা সেই হাসি এখন পিয়ারুর মুখে নেই। বরং সেখানে ভর করছে অমাবস্যার সব অন্ধকার।
পানিতে ভাসছে শুধু লাশ আর লাশ। পরস্পর জড়াজড়ি করে ধরা একজোড়া লাশের দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় পিয়ারু বলল- গতরাতে আমি যার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, যাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলাম সে আকরাম, আপনি নন। এখন বুঝতে পেরেছি জীবনের শেষ অবলম্বন থেকেও আমি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। শহরের ছেলে আপনি, বন্ধুর বিয়ে উপলক্ষে গ্রামে এসেছেন। এক দিন আগেও আমার সব ছিল। কিন্তু আজ কিছু খেতে দেব দূরে থাক, কোথাও একটু বসতে দেব সে সুযোগও আমার নেই। মাত্র কয়েক ঘণ্টার তাণ্ডবে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আপনার অতি সত্বর বাসায় ফিরে যাওয়া দরকার। আপনি চলে যান। আনন্দ করতে এসে অনেক কষ্ট পেলেন। বিভৎস কিছু স্মৃতি নিয়ে যাচ্ছেন সাথে করে। আকরাম আপনাকে বড় বিশ্বাস করত। যদি পারেন আপনার বন্ধুকে ক্ষমা করে দেবেন।’

এমন সময় হাঁউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আকরামের বড় ভাই এসে হাজির। পানির স্রোতে তিনি নাকি অনেক দূর ভেসে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর কান্না কিছুটা থামলে ইশারায় পিয়ারুর প্রতি লক্ষ্য রাখতে বললাম। আসলে এ সময়ে কেউ কারো প্রতি লক্ষ্য রাখার অবস্থায় নেই। গত রাতে এ ঘরে মেহমানসহ ত্রিশ-পঁয়ত্রিশজন লোক ছিল। অথচ এখন আমরা মাত্র তিন জন। জানি না চট্টগ্রামের কী অবস্থা। বাসায় সকলে নিশ্চয় আমার বেঁচে থাকার আশা ত্যাগ করেছেন। মা এর কথা মনে পড়তেই নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। বুক চিরে কান্না বেরিয়ে এল। তারপর চরম স্বার্থপরের মত পিয়ারুর কাছে গিয়ে বললাম- আপনি কিছু ভাববেন না, পানির স্রোতে আকরাম হয়ত একটু দূরে ভেসে গেছে, কিছুক্ষণের মধ্যে নিশ্চয় চলে আসবে- বলেই আমি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে সামনে পা বাড়ালাম।
ক’ কদম গিয়ে পেছনে ফিরে দেখি পিয়ারু সেই একই ভাবে ভাংগা গাছের গোড়ায় গালে হাত দিয়ে বসে অছে এবং ভেসে যাওয়া অগণিত লাশের মাঝে কাকে যেন খুঁজে ফিরছে। ইচ্ছে করছিল আমি আবার ফিরে গিয়ে নিঃসঙ্গ পিয়ারুর পাশে দাঁড়াই, তাকে সান্ত্বনা দেই। কিন্তু পরক্ষণেই বাসার কথা মনে পড়ায় স্বার্থপর মন আমাকে আর পেছনে ফিরতে দেয়নি।

কোথাও রাস্তা-ঘাটের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। সব জমিনের সাথে মিশে গেছে। যতদূর চোখ যায় পানিতে ভাসছে লাশ আর লাশ। বদরখালী বাজারের কাছাকাছি এসে একত্রে ভাসমান পাঁচ ছয়টি লাশের একটিতে আমার চোখ আটকে যায়। পরণে এক খণ্ড কাপড় নেই। চোখ দুটো খোলা, ঠোঁট ইষৎ ফাঁকা। মনে হল আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। দ্রুত এগিয়ে বন্ধুর হাত ধরে কাছে টেনে নিলাম। গত পরশু বিয়ে করেছে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আকরাম। হাতে লেগে আছে মেহেদী রং, ভাল করে চেয়ে দেখলাম, মনে হল বন্ধুর অধরে এখনো লেগে আছে নববধূর অধরে মাখা লিপস্টিক। গায়ের জামাটা খুলে বিবস্ত্র বন্ধুর কিছুটা লজ্জা ঢাকলাম। তারপর তাকে সামনে নিয়ে কিবলামুখি হয়ে দাঁড়ালাম জানাজার নামাজ পড়ার জন্য। শব্দ করে কাঁদলে নামাজ ভেংগে যায়। আজ আমি নামাজে দাঁড়িয়ে ছোট্ট শিশুর ন্যায় ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদেছি। জানি না কান্না বিজড়িত আমার এ প্রার্থনা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে কি না। তারপর আস্তে করে বন্ধুকে তার সাথীদের দিকে ঠেলে দিয়ে বিড়বিড় করে বললাম- বন্ধু, পিয়ারুকে যেভাবে দেখে এসেছি, সে তোমার এ দৃশ্য সইতে পারবে না। এভাবে তার মুখোমুখি হয়ে তার কষ্ট বাড়ানোর আর কী দরকার। বরং চলে যাও দৃষ্টির আড়ালে, অনেক দূরে। পরকালে আবার দেখা হবে। পারলে ক্ষমা করে দিও।

যতই সামনে অগ্রসর হই, চোখের সামনে ভেসে উঠে গত সন্ধ্যায় দেখা পিয়ারুর হাস্যোজ্জ্বল মুখ আর কানে বাজে আকরামের কথা- বড় পিয়ার করে পিয়ারু নামক একটি মেয়েকে বিয়ে করেছি. . .। সকালে পিয়ারু বলা কথা- রাতে আমি যার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম সে আপনি নন, আকরাম।
চট্টগ্রাম এসে আমি দু এক দিনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধুসহ একটি রিলিপ টীম নিয়ে বদরখালী যাই। টীম সদস্যদের ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বিস্তারিত খবরাখবর জানতে আকরামদের বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম এবং আমার কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম। আকরামদের ঘরে এগারজন সদস্যের মধ্যে মারা গেছেন চার জন। আকরাম, আকরামের বৃদ্ধা মা এবং দু জন শিশু। লজ্জায় আমি নিজে তাদের ঘরে যেতে পারিনি। কারণ আকরামের লাশ সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে শেষ বারের মত পিয়ারুকে দেখতে না দিয়ে যা করেছি, আমার ভেতর এক প্রকার অপরাধবোধ কাজ করেছে। আর সে দিন পিয়ারুকে ওভাবে ফেলে চলে এসে যে চরম স্বার্থপরের পরিচয় দিয়েছি, কিভাবে আমি তার মুখোমুখি হব?
এরপর আমি আর তাদের কোন খবর রাখিনি। আজ প্রায় দু বছর পর হঠাৎ পিয়ারুর সাথে দেখা সেই ককসবাজারের বদরখালী থেকে অনেক দূরে চট্টগ্রাম শহরে, যা ছিল একেবারে অপ্রত্যাশিত, অকল্পনীয়।

বাসায় গিয়ে পিয়ারুর কাহিনী শুনলাম। আকরামের মৃত্যুর পর পিয়ারুর মা-বাবা অনেক করে বলেছিলেন পিয়ারুকে চলে আসার জন্য। কিন্তু আকরামের বৃদ্ধ বাবাকে ফেলে সে চলে আসে নি। তা ছাড়া কিছুদিন পর সে বুঝতে পেরেছে, তার কোল আলোকিত করে নতুন মুখ আসবে। ছয় মাস আগে আকরামের বাবার মৃত্যু হলে পিয়ারু বাপের বাড়িতে চলে আসে। সাথে আকরামের ভালবাসার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন ফুটফুটে এক শিশু সন্তান। গ্রামের বাড়িতে নানাজনের নানা কথা, নানা প্রস্তাব। ওসব তার ভাল লাগেনা। তাই দুমাস হল সে চট্টগ্রামে তার বড় ভাইয়ের বাসায় চলে এসেছে। বর্তমানে সে একটি কিন্ডার গার্টেনে চাকরি করে। পিয়ারু তার বর্তমান নিয়ে বেশ ভাল আছে।
আমি বললাম- আপনি ভাল আছেন শুনে সত্যিই আমার খুব আনন্দ লাগছে। আমি দুঃখিত যে, এত দিন আপনাদের কোন খবরাখবর নিতে পারিনি।

সে ঈষৎ হেসে বলল- মাসুদ ভাই, কী যে বলেন। ইতিহাসের সেই ভয়াল রাত্রে নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে যদি আপনি আমাকে না বাঁচাতেন, আমি কি আজ আপনার সাথে কথা বলতে পারতাম? সেই ভয়াল রাতের কয়েক দিন পর আকরামের কয়েকজন বন্ধুসহ একটি রিলিপ টিম নিয়ে আপনি বদরখালী গিয়েছিলেন শুধু আমাদের জন্য। ওরা আমাদের ঘরে গিয়ে আমার কথা, পরিবারের অপরাপর সদস্যদের কথা একটা একটা করে জিজ্ঞেস করছিল এবং আকরামের কথা বলে কেঁদেছিল। তখনই আমি সব বুঝে ফেলেছিলাম। আপনি আমাদের ঘরে যাননি ইচ্ছে করে এবং সেটি এ জন্য যে, আপনাকে দেখলে আকরামের কথা মনে করে আমি কষ্ট পাব। তাছাড়া একজন মুসলমানের জন্য সর্বশেষ যে কাজটি করতে হয় আপনি ছাড়া আকরামের জন্য তাতো আর কেউ করেনি। ঝড়ের কিছু দিন পর আরমানের এক মামা এসে জানাল তিনি নাকি কার মুখ থেকে শুনেছেন যে, বিয়ে উপলক্ষে আসা আরমানের এক বন্ধু ভাসমান একটি লাশের আব্রু ঢেকেছে নিজের জামা খুলে দিয়ে। জানাজা পড়েছে একা দাঁড়িয়ে। তখন আমার বুঝতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি যে, আকরামের সে বন্ধুটি আপনি ছাড়া আর কেউ নন এবং আপনি যার জানাজা পড়েছেন সে আকরাম ছাড়া আর কে হতে পারে?
তারপর এক মিনিট বসুন - বলে পিয়ারু ভেতরে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পর ছোট্ট একটি বাচ্চা কোলে নিয়ে দোলাতে দোলাতে এসে বলল-সত্যিই আপনার বন্ধু বড় পিয়ার করে পিয়ারু নামক একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন এবং এক দিনেই তিনি প্রাণ উজাড় করে আমাকে দিয়ে যান তাঁর ভালবাসার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। তাই আমিও আমার ছেলের নাম রেখেছি আকরাম। অবিকল আপনার বন্ধুর চেহারা পেয়েছে সে।
তারপর শিশুটির চোখে মুখে অজস্র চুমো দিয়ে হাসতে হাসতে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল- এই দেখুন আপনার বন্ধুর ছেলে। এক আকরামকে হারিয়ে আর এক আকরাম পেয়েছি আমি।
আম থ বনে চেয়ে রইলাম পিয়ারুর হাসিমাখা মুখের দিকে। এই সেই হাসি যা আমি দেখেছিলাম ২৯এপ্রিল ৯১ সন্ধ্যায়। তারপর আজ। দ্রুত আমার মাঝে অন্যরকম এক পরিবর্তন চলে আসে। হাত বাড়িয়ে বাচ্চাটিকে নিতে ভুলে গেলাম। কিছু ভেবে দেখার আগেই ঝট্ করে বলে ফেলি- আচ্ছা আপনার কি নতুন করে আর কারো ঘর সাজাতে ইচ্ছে হয় না?
পিয়ারুর মাঝে কোনরকম চাঞ্চল্য লক্ষ্য করলাম না। সে বাচ্চাটিকে বুকে চেপে ধরে সোফায় আমার সামনা সামনি বসে একবার আমার পুরো শরীরে চোখ বুলিয়ে নেয়। কিছুক্ষণের জন্য তার চোখ দুটি স্থির হয়ে থাকে আমার চোখে। জানিনা আমার চোখে কী দেখতে পেল সে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল- মাসুদ ভাই, আপনার বন্ধু আমাকে এক দিনে যা দিয়েছেন এবং তা এত বেশি যে, পুরো জীবন আমাকে তার ঋণ শোধ করে কাটাতে হবে। নানাদিক থেকে চাপ আসায় বিষয়টি নিয়ে অনেক ভেবেছি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। না, তা সম্ভব নয়। আমি পারব না। কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতা করি। বড় আনন্দ পাই শিশুদের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে। মনে হয় আমিও শিশু।
মন থেকে আর সাড়া পাই না যে, আমি আবার যৌবনে পদার্পণ করি।
গল্পটি আমার প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‌’অন্তরে অন্তরা’ থেকে নেয়া।
নইম কাদের
E-mail : nayeemquaderctg@gmail.com
Mobile : 01819 398 338

বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২০

কেউ যদি বুঝতে পারে যে, কিছুদিনের মধ্যে তার মৃত্যু হবে তাহলে তার জন্য ১০টি করণীয় ও দিক নির্দেশনা​

প্রশ্ন: কোন ব্যক্তি যদি বুঝতে পারে যে, কিছুদিনের মধ্য তার মৃত্যু হবে তাহলে তার করণীয় কী?
উত্তর:
মৃত্যু এক অবধারিত ও সুনিশ্চিত বিষয়। এখান থেকে পালানোর কারও সুযোগ নাই। কিন্তু কেউ জানে না, কার কখন কোথায় মৃত্যু সংঘটিত হবে। তাই তো আল্লাহ তাআলা বলেন:
ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ ۚ إِنَّ اللَّـهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
“কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।" (সূরা লোকমান: ৩৪)

তবে কেউ যদি মারাত্মক অসুখ, শারীরিক জটিল অবস্থা বা বিশেষ পরিস্থিতিতে অনুভব করতে পারে যে, হয়ত সে জীবন সায়াহ্নে এসে উপনীত হয়েছে, ক্ষণকাল পরেই তার জীবনের সূর্য নি:সীম অন্ধকারে হারিয়ে যাবে; আর কখনোই তা ফিরে আসবে না তাহলে তার উচিত, মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং জীবনের বাকি সময়টুকুকে অমূল্য সম্পদ মনে করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও গুনাহ মোচনের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা।
এমন পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে ১০টি দিক নির্দেশনা তুলে ধরা হল:
◈ ১) পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে নিজের অতীত জীবনের সকল গুনাহের কথা তুলে ধরে অনুতপ্ত হৃদয়ে নিখাদ চিত্তে তওবা-ইস্তিগফার করা।
◈ ২) আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোকে যথাসাধ্য অধিক পরিমাণে নফল ইবাদত-বন্দেগি ও নেকির কাজ দ্বারা ভরপুর করে দেয়া।
◈ ৩) সাধ্যমত কুরআন তিলাওয়াত, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, দুআ, তাসবিহ ও জিকির-আজকার দ্বারা জিহ্বাকে সজীব রাখা।
◈ ৪) কবরের অন্ধকার, হাশরের ভয়াবহতা, জাহান্নামের মর্মন্তুদ শাস্তি ইত্যাদির ভয়ে আল্লাহর নিকট ক্রন্দন করা এবং তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা।
◈ ৫) সর্বদা ওজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করা।
◈ ৬) গল্প-গুজব, খেলা-ধুলা, বিনা দরকারে মোবাইল টিপা, টিভি দেখা এবং অনর্থক কথা ও কাজে সময় অপচয় না করা।
◈ ৭) কারো সাথে লেনদেন থাকলে তা দ্রুত সমাধান করা।
◈ ৮) কারো ’হক‘ নষ্ট করে থাকলে অনতিবিলম্বে তা মালিককে ফিরিয়ে দেয়া। কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে বা কারো প্রতি জুলুম-অত্যাচার করে থাকলে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা বা তাকে ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং তার প্রতি কারো দাবি-দাওয়া ও অভিযোগ-অনুযোগ থাকলে বিষয়টি মিটমাট করে নেয়া।
◈ ৯) দান-সদকা করা। (তবে তার সম্পদের সর্বোচ্চ তিনভাগের একভাগ দান করতে পারে। এর বেশি দান করা শরিয়ত সম্মত নয়)
◈ ১০) মৃত্যুর পরে কী করণীয় সে বিষয়ে তার পরিবার বা উত্তরাধিকারী লোকজনকে দিক নির্দেশনা দেয়া ও ওসিয়ত করা।
পরিশেষে দুআ করি, মৃত্যুর পূর্বে দয়াময় আল্লাহ যেন আমাদের সকল গুনাহ মোচন করে দেন, বেশি বেশি নেকির কাজ করে তাঁর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দান করেন এবং কবর, হাশর ও জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে রক্ষা করেন। আমীন।
▬▬▬▬◐◑▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার/ট্যাগ করতে ভুলবেন না কিন্তু।

বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০২০

মে মাসে নক্ষত্রের উদয় ও করোনার বিদায়

আমরা আজ মারাত্মক বিপদের মাঝে। ইতিহাসের খুব মারাত্মক এক বিভীষিকাময় সময় আমরা পার করছি। লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আজ সকাল পর্যন্ত এক লক্ষ সত্তর হাজারের ও উপরে মানুষ এই ভাইরাসে প্রাণ দিয়েছে। মৃত্যুর মিছিল যে আরো কত লম্বা হবে তা আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ আযযা ও জাল্ল ই ভালো জানেন। তবে আমাদের নবীর (সা) দুআর বরকতে আমাদের মারাত্মক ক্ষতি হবেনা বলে বিশ্বাস করি আমরা।
আজ একটা হাদীস ফেসবুক পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তা হলে কৃত্তিকা বা সুরাইয়া নামক এক তারকা নাকি মে মাসের ১২ তারিখ উদয় হতে যাচ্ছে। তার কারণে করোনা বিদায় নেবে।
একটা তারকাপুঞ্জ আছে, যার আরবি নাম সুরাইয়া। যেটাকে বাংলায় কৃত্তিকা বলে, ইংরেজিতে বলে Pleiades (প্লায়েডিয)। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এর উদয় ফজরের সময় হয়। এই সময় এই তারকার উদয়ে মানুষের উপর থেকে নানা ব্যাধি বিদায় নিয়ে চলে যেতে পারে বলে একটা হাদীস আছে। আমার মনে হয় এই হাদীস নিয়ে একটু আলোচনা হওয়া দরকার।
ইমাম আততাহাওয়ী তার “শারহ মুশকিল আল আসার” গ্রন্থে ইমাম আবু হানিফার সনদে একটা হাদীস নিয়ে এসেছেন। এই হাদীসকে তিনি দূর্বোধ্য হাদীস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এবং অত্যন্ত গভীর পান্ডিত্য দিয়ে তার বিশ্লেষণ করেছেন। হাদীসটাতে আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, “যখন তারাটি উঠবে, তখন প্রতিটি শহরবাসী থেকে ব্যাধি উঠিয়ে নেয়া হবে”।
ইমাম আততাহাওয়ী বলেন, এই হাদীস নিয়ে ভাবতে যেয়ে আমি এই তারকার সন্ধান করা শুরু করলাম। কয়েকটা হাদীস নিয়ে গবেষণা করতে যেয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে উমারের হাদীসের সন্ধান পেলাম। তিনি বলছেন, ‘মহানবী (সা) ব্যাধি চলে যাওয়ার আগে ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন’। বর্ণনাকারী উসমান বলেন, আমি ইবনে উমারের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, কখন যাবে সেই ব্যাধি। তিনি বললেন, ঐটা সুরাইয়া তারকাপুঞ্জ উদয়ের পর।
ইমাম আততাহাওয়ী বলেন, এই হাদীস থেকে আমরা বুঝলাম সুরাইয়া তারকা পুঞ্জ উদিত হলে ব্যাধি চলে যাওয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা হলো খেজুরের ব্যাধি। মূলতঃ গরম আসার আগে বিশেষতঃ বসন্তের সময় খেজুরে রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। ঐটা চলে যায় সুরাইয়া উঠলে। আমি আরো হাদীস গবেষণা শুরু করলাম কোন সময়ে এই সুরাইয়া বা প্লায়েডিয উদয় হয় তার কথা কোন হাদীসে পাওয়া যায় কিনা।
গবেষণায় আবু হুরায়রার বর্ণিত আরেকটা হাদীস পেলাম যেখানে মহানবী (সা) বলছেন, “সকালে তারকাটা উঠলে মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে পড়া ব্যাধি আল্লাহ উঠিয়ে নেন, অথবা কমিয়ে দেন”। আমি বুঝলাম যে সুরাইয়ার এই উদয়টা তাহলে ভোর বেলায় বলা হলো। আমি তখন মিশরীয়ের পঞ্জিকা ঘাটতে থাকলাম। সকালে এই তারকার উদয় তাদের সাল অনুযায়ি বাশান্স মাসে হয়, যেটা তাদের পঞ্জিকায় ঐ মাসের ১৯ তারিখে হয়। এইবার এই ক্লু ধরে ইরাকি পঞ্জিকায় এই মাসকে মিলিয়ে আয়ার (মে)কে পেলাম, এবং এই মে মাসের ১২ তারিখ এই তারা সকালে উঠে বলে জানলাম।
এরপর ইমাম আততাহাওয়ী আবু হুরায়রার আরেকটি হাদীস উল্লেখ করেন যেখানে বলা হচ্ছে, মহানবী (সা) বলেন,
إِذَا طَلَعَتِ الثُّرَيَّا صَبَاحًا رُفِعَتِ الْعَاهَةُ عَنْ أَهْلِ الْبَلَدِ
যখন সকালে সুরায়্যা উঠবে তখন শহরবাসিদের কাছ থেকে ব্যাধি উঠিয়ে নেয়া হবে। শারহ মাআনি আলআসার, ৪/২৩।

এরপরে ইমাম আততাহওয়ী বর্ণিত এই হাদীস গুলো নিয়ে যথেষ্ঠ গবেষণা হয়েছে। আমাদের শায়খ ইমাম আলবানী এই ধরণের ৩টা হাদীস নিয়ে প্রমান করেছেন ৩টা হাদীসই দাঈফ, তথা দূর্বল।
তবে ইমাম তাহাওয়ীর সনদগুলো বিবেচনা করলে হুট করে দাঈফ বলা যায়না। বরং ইমাম আহমাদের মুসনাদের হাদীস, ইমাম মুহাম্মাদের “আলআসার”এর হাদীস, এবং খেজুর বিক্রি সংক্রান্ত সব হাদীস গুলো একত্রে আনলে আবু হুরায়রার হাদীসকে হাসান সাব্যস্ত করা যায়, এবং ইবন উমারের হাদীসকে সাহীহ মানতে হয়।

যা হোক এই হাদীসগুলোর সাধারণ আলোচনা ছিলো একটু ভিন্ন। তা হলো আরব পঞ্জিকায় শীতকাল শুরু হয় ইংরেজির অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে। ঐ সময়ে সুরাইয়া নামের এই নক্ষত্রপুঞ্জ সন্ধ্যার পর উদয় হতে থাকে। রাত গভিরে তখন এই তারা খুব সহজে দেখা যায়।
সৌরাজগতের অনেক তারকার সাথে আমার নানা আমাকে পরিচিত করিয়ে দেন। এই সুরাইয়াকে তিনি “তিত পুঁটির ঝাঁক” বলতেন। এটা ৬ বা ৭ বা ৯ বা ১১ তারকার একটা পুঞ্জ যা অক্টোবরের আকাশে খালিচোখে সুন্দর ভাবে দেখা যায়। কিন্তু এই পুঞ্জে আছে আরো ২৫০টা সংগী তারকা, যারা এক সাথেই কক্ষপথে “পুঁটি মাছের” ঝাঁক মত বেঁধে চলে। সপ্তদশ শতকে গ্যালিলির টেলিস্কোপে পাওয়া তথ্যে তার গতিময়তার বর্ণনা আছে। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে এই তারকা পুঞ্জ রাত কিছু গভীর হলে উদয় হয়। তখন বেশ বৃষ্টি হয়। আরব দেশ গুলোতে তখনই বসন্তের পূর্ণতার সময়।
এরপর থেকে শুরু হয় নানা রকম ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার প্রাদূর্ভাব। একে তো সূর্যের প্রখরতার অভাব, আরো রাত গুলোর দীর্ঘতা ও দিন গুলোর হ্রস্যতা। এই সব কারণে পৃথিবীতে অনেক ব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যায়। কখনো তা মহামারির রূপ নিয়ে ও আসতে পারে। এই সময়টা আসলে খুবই কষ্টের সময়।
আস্তে আস্তে সূর্য তার উদয়স্থল পরিবর্তন করে উত্তর গোলার্ধের দিকে সরতে থাকে, ফলে গাছে গাছে অংকুরোদ্গম হতে থাকে। ঘাষে বনজে বনফুলের সমারোহ শুরু হতে থাকে। আর ভাইরাসের সংক্রমনও বাড়তে থাকে সমান্তরালে।
এপ্রিল আসার পর সূর্য আরব অঞ্চলে মোটামুটি জোর পায়। সুরাইয়ার উদয় হয় তখন শেষ রাতে। এই ভাবে মে মাসের ১২ তারিখের দিকে তার উদয় আসে ফজরের পর। এই সময় আরব দেশে মারাত্মক গরম শুরু হয়। উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে শুরু হয় উষ্ণতার আবহ। ফলে পরিবেশ হয়ে ওঠে অনেকটা ভাইরাস মুক্ত। কারণ গরমে ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া বাড়তে কষ্ট পায়।
আমাদের নবী (সা) ঐ টাই বুঝিয়েছেন তার হাদীস গুলোতে। তিনি মূলতঃ এখানে দুইটা বিষয়ের অবতারণা করেছেনঃ
১- মে মাসে সুরাইয়ার উদয়কে ফসল সুন্দর হবার ক্ষণ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। ঐ সময় খেজুর বিক্রির জন্য ভাল, কারণ খেজুরে কোন ব্যাধি ও শষ্যে কোন পোকা থাকেনা। কাজেই মে মাসের পর থেকেই খেজুর কেনা বেচার মওসুম ধার্য্য হলে ক্রেতা বিক্রেতা দুই জনেই সমস্যা মুক্ত হবে।
২- সুরাইয়া যখন সকালে উদয় হওয়া শুরু করে, অর্থাৎ মধ্য মে থেকে সূর্যের তাপ বাড়তে থাকে। সাথে সাথে শীতের কারণে যে সব পরিবেশিক সমস্যার সৃষ্টি হয় তা কমতে শুরু করে।
এই হাদীস গুলো পড়লে আমাদের বর্তমান প্রক্ষিতে করোনার আঘাতে ক্ষত বিক্ষত ও আশাহীন মানবতা অনেক আশার আলো লাভ করে। কারণ গরমের আগমন হচ্ছে, তাই হাদীস অনুযায়ী রোগ বালায়ের প্রাদুর্ভাবও কমতে শুরু করবে। এইটাই হলো ঐ কৃত্তিকা বা প্লায়েডিয নক্ষত্রপুঞ্জ উদয়ের ব্যাপারে হাদীসগুলোর মর্মকথা।
এখানে আমাদের যে জিনিষটা মাথায় রাখতে হবে তা হলো সারা বছর সূর্য, চন্দ্র ও তারকা রাজির আকর্ষণের কারণে জল বায়ূর যথেষ্ঠ পরিবর্তন হয়। আমি একবার মদীনায় আমার শায়খ ডঃ প্রফেসর যায়দ আলজুহানীর কাছে সৌরজগতের তারাকার অবস্থানের সাথে জল বায়ুর প্রভাব নিয়ে কিছু শেখার চেষ্টা করেছিলাম। উনি বলেছিলেন, চাঁদ সূর্য ও সূরাইয়ার কক্ষ পথের অবস্থান সমান বিন্দুতে এলে প্রচুর বৃষ্টি হয়। এইটা প্রাকৃতিক সিস্টেমের মধ্যে আল্লাহ দিয়েছেন। যেমন ভাবে দিয়েছেন চাঁদের আকর্ষণে জোয়ারের স্ফিতি, ও তার বিকর্ষণে ভাটার টান। এই সিস্টেমের প্রভাবের প্রতি বিশ্বাস করলে গুনাহ নেই। কেও যদি বলে চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার ভাটা হয়, তা হলে এই কথায় কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু যখন বলা হয় আল্লাহ নন, চাঁদই এই কাজটা করে, তখন হয় শিরক।
সপ্তম হিজরিতে মক্কার কাফিরদের সাথে সন্ধির সময় আমাদের নবী (সা) হুদায়বিয়্যাহতে অবস্থান করেন কয়েকদিন। একদিন সকালে ফাজরের সালাত আদায় করলেন। এরপর তিনি সাহাবিগণের দিকে ফিরলেন। ঐ রাতে বেশ বৃষ্টি হয়। তিনি বললেন, আজ তোমাদের রাব্ব আল্লাহ তাআলা কি বলেছেন জানো? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ
أَصْبَحَ مِنْ عِبادي مُؤْمِنٌ بِيَ وَكافِرٌ، فَأَمّا مَنْ قَالَ مُطِرْنا بِفَضْلِ اللهِ وَرَحْمَتِهِ فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِيَ وَكافِرٌ بِالْكَوْكَبِ وَأَمّا مَنْ قَالَ مُطِرْنا بِنَوْءِ كَذا وَكَذا فَذَلِكَ كافِرٌ بِيَ وَمُؤْمِنٌ بِالْكَوْكَبِ
এই সকালে আমার বান্দাদের কেও কেও আমার উপর ঈমান নিয়ে জেগেছে, কেও কেও হয়েছে কাফির। যে বলেছে, আমরা আল্লাহর রহমতে ও তাঁর কৃপায় বৃষ্টি দ্বারা সিঞ্চিত হয়েছি, তারা আমার উপর বিশ্বাসী, এবং তারকায় অবিশ্বাসী। কিন্তু যে বলেছে আমরা ঐ ঐ তারকার জন্য বৃষ্টি পেয়েছি, তারা আমার প্রতি অবিশ্বাসী ও তারকার প্রতি বিশ্বাসী।

এই হাদীসটা আমাদের ঈমানকে শানিত করে। ইনশাআল্লাহ করোনা আক্রমন কমে আসবে। পৃথিবী থেকে সে বিদায় নেবে। আমাদের অনেক ক্ষতিও করবে। সামনে গরমের মৌসুম আসতেছে, তখন তার তীব্রতা, তীক্ষ্ণতা ও প্রসার কমে যাবে ইনশাআল্লাহ। তা হবে আল্লাহর রহমতে ও ফদ্বলে। কোন তারকার শক্তিতে নয়, নয় তাদের প্রভাবে।
(ড. আব্দুস সালাম আজাদী সাহেবের টাইমলাইন থেকে নেওয়া)

বুধবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২০

তারাই সৎ ও সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ “তোমাদের মুখ পূর্ব দিকে বা পশ্চিম দিকে ফিরাবার মধ্যে কোন পুণ্য নেই। বরং সৎকাজ হচ্ছে এই যে, মানুষ আল্লাহ, কিয়মতের দিন, ফেরেস্তা আল্লাহর অবতীণ কিতাব ও নবীদেরকে মনে প্রাণে মেনে নেবে এবং আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় ধন-সম্পদ আত্মীয়-স্বজন, এতীম, মিসকীন, মুসাফির, সাহয্য প্রার্থী ও ক্রীতদাসদের মুক্ত করার জন্য ব্যয় করবে আর নামাজ কায়েম এর্ যাকাত দান করবে। যারা অংগীকার করে তা পূর্ণ 
করবে এবং বিপদে-অনটনে ও হক-বাতিলের সংগ্রামে সবর করবে তারাই তারাই সৎ ও সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী।

সূরা বাকারা আয়াত-১৭৭

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০

কষ্টের রকমফের নইম কাদের

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ  কোটি কোটি মানুষ ঘরে বসে আযান শুনছেন, কিন্তু মসজিদে যেতে পারছেন না। জুমার পরিবর্তে যোহরের সালাত আদায়, সে কি কষ্ট! সে কি আহাজারি!
বৈশাখের প্রথম দিনে ঘরে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।....
আজ বাসাতে কবিতা পড়লাম। কবিতা পড়েই দিনটা শুরু করেছি- সৈয়দ হাসান ইমাম।

আজ অনেক দিন বের হতে পারছি না, অভাবের সংসার, বউ বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি- ফুটপাথের জনৈক চা বিক্রেতা।
"বাবা, তোমাকে কোনদিন বলা হয়নি আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি।" আমার বাবা এই ম্যাসেজটি পড়ে যেতে পারেননি, ম্যাসেজটা আন সিন অবস্থাতেই পড়ে আছে। আমি জানি আর কোনদিনও এ ম্যাসেজটা সিন হবে না, আমার বাবার হোয়াটসঅ্যাপে লাস্ট সিন সারাজীবন ৩১শে মার্চ, সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে আটকে থাকবে- করোনাভাইনাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী দুদক পরিচালক মরহুম জালাল সাইফুর রহমানের ছেলে।
করোনাভাইরাস মহামারীতে গোটা পৃথিবী আজ স্তব্ধ, বিচ্ছিন্ন। এ অবস্থায় আমরা সবাই কষ্টে আছি। তবে কষ্টের রঙ এবং ব্যথা একেক জনের কাছে একেক রকম।
হে আকাশ ও জমিনের রব, তুমি আমাদের ক্ষমা করো, আমাদের নাযাত দাও। গোটা বিশ্বকে তুমি করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্তি দাও।

সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০

রাঙ্গা প্রভাত: আব্দুল হান্নান চৌধুরী

ভে‌ারের সোনালী আ‌লোয় ভ‌রে উঠুক জগতময়
দুঃখ বেদনা ঘু‌চে যাক সব জীবনটা হোক সু্খময়।
আধাঁর রা‌তের গ্লা‌নি যত ধু‌য়ে মু‌ছে হোক সাফ
নতুন দি‌নের আগম‌নে প্রা‌নে প্রা‌ণে শান্ত‌ি পাক।
লুন্ঠ‌ি‌ত মানবতা আজ শং‌কিত গোটা জনপদ
মুক্ত‌ি‌র সন্ধান না‌হি কভু মি‌লে, সন্মুখ যত বিপদ।
"মানু‌ষের ত‌রে মানুষ" কথা‌টি ভুল‌তে ব‌সে‌ছি চিরত‌রে
মানু‌ষের প্রাণ না‌শে বুকটা কা‌ঁপেনা একটুও ভয় ড‌রে।
মজলু‌মের আর্তনা‌দে আজ আকাশ বাতাস ভারি
নিত্য নতুন চল‌ছে জুলুম,কত ধরন আজ তাহা‌রি।
আধা‌ঁরে ছে‌য়ে আ‌ছে সারা, পথ খু‌জে না‌হি কভু পাই
বুক ভ‌রে নিশ্বাস নি‌তে কোথাও একটুও আ‌লো নাই।
নতুন দি‌নের আগম‌নে, পুরা‌নো ক্ষত সব মু‌ছে যাক
আ‌লোয় আ‌লোয় ভ‌রে উঠুক, মানবতা মুক্ত‌ি পাক।
অন্তর্যামী প্রভুর কা‌ছে তু‌লি এই দু‌টি হাত
আধাঁর রা‌ত্রি ভেদ ক‌রে যেন আ‌সে রাঙ্গা প্রভাত।

রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২০

চট্টগ্রামে আরো ৬জন করোনা শনাক্ত

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্ক ১২ এপ্রিল ২০২০: চট্টগ্রামে আরো ৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রাম মোট রোগীর সয়খ্যা দাড়ালো ১৫জন। আজ রোববার ১২ এপ্রিল রাতে এ তত্য জানান চট্টগ্রাম বিভাগী স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ হাসান শাহরিয়ার কবীর এর মধ্যে একজন চট্টগ্রামের দামপাড়ায় (বয়স ৫৫), ফৌজদার হাট (৪৫বছর), সাতকানিয়া (৩২ বছর), সাতকানিয়ায় আরেক জন (১৯ বছর) ও পটিয়ায় ৬ বছরের েএক শিশু রেয়েছে।আরো একজনের দ্বিতীয় দফায় টেস্টে পজেটিভ পাওয়া গেছে। তার বাড়ি সাতকানিয়ায়। 

এছাড়াও চট্টগৃাম বিভাগের লক্ষীপুরে আজো একজনের নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাত ৯টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য)।

সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০

বিবেক জাগ্রত হোক; সচেতন করি সকলকে

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ লকডাউনের পূর্বেই নেপালের embassy বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় ২০০ নেপালী ডাক্তারকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নেপালে নিয়ে চলে গেছে।

ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল চট্টগ্রাম (দেবী শেঠীর হাসপাতাল) এর কার্ডিয়াক টিমের সব চিকিৎসক ও স্টাফ এই করোনা দুর্যোগে হাসপাতাল ছেড়ে তাদের দেশ ইন্ডিয়ায় চলে গেছে ।

এই করোনা দুর্যোগের মধ্যে নামী দামী এ্যাপোলো হাসপাতালও গতকাল বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছে। বসুন্ধরার ওই জায়গায় Ever Care নামে নতুন হাসপাতাল চালু হয়েছে। দুর্যোগ শেষ হলে আবার এপোলো হয়তো নতুন জায়গায় নতুন ভাবে আসবে।

অ্যামেরিকান অ্যাম্বাসী ইতোমধ্যে তাদের প্রায় 300 নাগরিককে বিশেষ বিমানে করে বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নিয়েছে।

আজ শুনলাম জাপানী নাগরিকরাও বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ছেড়েছেন।

শুরু হতে যাচ্ছে করোনার ক্রিটিক্যাল ফেইজ।

একটা বৈশ্বীক মহাবিপর্যয় আমরা অতিক্রম করছি। এটা এমন একটা সময় যখন লাশের জানাযা কিংবা দাফন দেবার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। করোনা আক্রান্তের কথা শুনলে মানুষ তার বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলছে। আত্মীয়স্বজনরা লাশ হাসপাতালে রেখে পালাচ্ছে।

করোনা ক্রাইসিস কালীন কোন রোগী কোন হাসপাতাল দেখবে এ ব্যাপারে এতদিন নির্দিষ্ট গাইডলাইন না থাকায় রোগী ভর্তিতে জটিলতা হচ্ছিল। ইতোমধ্যে এ জটিলতা নিরসন হয়েছে।

তবে করোনা আক্রান্ত রোগীর মূল চিকিৎসা Ventilator (লাইফ সাপোর্ট) যা দেয়ার মতো যথেষ্ট সামর্থ্য ও পর্যাপ্ত ICU trained ডাক্তার আমাদের নেই। আমাদের দেশে ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ, ক্রিটিকাল কেয়ার নার্স এবং অন্যন্য ক্রিটিকাল কেয়ার স্টাফের সংখ্যা এবং হাসপাতালে আইসিইউ বেড সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

এই ক্রাইসিসের সময় সরকারি নির্দেশনা মেনে নিজ গৃহে অবস্থান করুন।

দেশের চিকিৎসকদের উপরই ভরসা রাখুন এবং তাদেরকে উৎসাহিত করুন। মনে রাখুন চিকিৎসকরাও আমাদের মতো মানুষ, তাদেরও পরিবার পরিজন রয়েছে। চিকিৎসকদের মনোবল ভেঙ্গে গেলে এই মহাবিপর্যয় সামাল দেওয়ার কেউই থাকবে না।

কার্টেসী - ডা: মো: ইমরুল হাসান

রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০

সেটিই তোমার অবস্থান, যে অবস্থায় আল্লাহ তোমাকে রাখেন

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ তুমি কি জানতে চাও, আল্লাহর কাছে তোমার সম্মান কতটকু? তাহলে দেখ, তিনি তোমাকে কোন অবস্থায় রেখেছেন?
- যদি দেখ তিনি তোমাকে তার যিকিরে মশগুল রেখেছেন, তাহলে জেনে রেখ, তিনি তোমাকে স্মরণ করতে চান।
- যদি দেখ তিনি তোমাকে কুরআন দ্বারা মশগুল রেখেছেন, তাহলে জেনে রেখ, তিনি তোমার সাথে কথা বলতে চান।
-যদি দেখ, তিনি তোমাকে ইবাদাত/আনুগত্যে ব্যস্ত রেখেছেন, তাহলে জেনে রেখ, তিনি তোমাকে তার সান্নিধ্যে টেনে নিয়েছেন।
- যদি দেখ, তিনি তোমাকে দুনিয়া দিয়ে ব্যস্ত করে দিয়েছেন, তাহলে জেনে নাও, তিনি তোমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন।
-যদি দেখ, তিনি তোমাকে লোকজনের সাথে মশগুল বানিয়ে দিয়েছেন, তাহলে জেনে নাও, তিনি তোমাকে অপমানিত করেছেন।
- যদি দেখ, তিনি তোমাকে দুআর দ্বারা ব্যস্ত রেখেছেন, তাহলে জেনে নাও, তিনি তোমাকে কিছু দিতে চান।
অতএব, সবসময় নিজের অবস্থা দেখ। তুমি কোন কাজে মশগুল? আল্লাহ তোমাকে যে কাজে ব্যস্ত রেখেছেন, সেটাই তোমার অবস্থান তাঁর কাছে।

মূল: ড. রাতিব আন-নাবলুসি।
অনুবাদ: ড.বি. মফিজুর রহমান আল-আযহারী।

মুসলিমদের প্রতি মদিনা শরীফের ইসলামী স্কলার ড. আহমদ আলী সিরাজের ১৫ পরামর্শ

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও এই ভাইরাস মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। লকডাউনের ফলে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। এখন আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের দিকে প্রত্যাবর্তনের সময় বলে মন্তব্য করেছেন মদিনা শরীফের ইসলামী স্কলার ড. আহমাদ আলী সিরাজ।
আহমাদ আলী সিরাজ বলেন, এই ঘরবন্দি অবস্থায় আমাদের হাতে অনেক অবসর সময় রয়েছে। অধিকাংশ মানুষকে দেখা যায় তারা অবসর সময়ের মূল্য দেয় না।
হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, নবী কারীম (সা.) বলেছেন, দুইটি নেয়ামত এমন রয়েছে অধিকাংশ মানুষ যার মূল্য দেয় না। সেই দুটি নেয়ামত হলো, সুস্থতা এবং অবসর সময়। এই জন্য আমাদের সময়ের মূল্য দিতে হবে।
মদিনা শরীফের এই ইসলামী স্কলার মুসলিমদের ঘরে সময় কাটানোর ব্যাপারে কতগুলো দিক দির্দেশনা দিয়েছেন। নিম্নে সে গুলো উল্লেখ করা হলো-
গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে। বিশেষ করে যেসব মহিলাদের দেখা যায়েজ নয়, তাদের দেখা বিরত থাকবে।
গান-বাজনা শোনা থেকে বিরত থাকবে। ঘরে ছবি ঝুলাবে না এবং রাখবে না।
অপ্রয়োজনে সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় নষ্ট করবে না।
যাচাই না করে কোনও খবর প্রচার করবে না এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবে না।
সমাজে ভয়ভীতি ছড়ানো থেকে বিরত থাকবে।
ছয় থেকে আট ঘন্টার বেশি না ঘুমানোর চেষ্টা করবে।
সারাক্ষণ মোবাইল হাতে রাখা, গেম খেলা এবং খারাপ জিনিস দেখা থেকে বিরত থাকবে।
ঘরেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামাতের সঙ্গে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করবে। সঙ্গে সঙ্গে সুন্নত, নফল, তাহাজ্জুত, ইশরাক, এবং আওয়াবিন নামাজ আদায়ের প্রতি গুরুত্ব দেবে।
নামায আদায়ের পর সুন্নত দোয়া দুরুদ পড়বে।
প্রতিদিন ১ পারা কোরআন পাঠ করবে এবং কোরআানের হাফেজরা তিন পারা পাঠ করবে।
দুরুদ শরীফ, ইস্তেগফার, আয়াতে কারিমা – ‘‘লা হাউলা ওলা কুয়াতা ইল্লা বিল্লা ‘’ পড়বে। তিন তাসবিহ-এর আমল করবে।
প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ মিনিট একাগ্রচিত্তে আল্লাহর নিকট দোয়া করবে।
প্রতিদিন কিছু সময় বই পড়বে। ভাল হবে ‘হায়াতুস সাহাবাহ’ বই পড়া। অথবা যে কোনও ভাল বই পড়া যেতে পারে।
শাবান মাসে নবী স. অনেক বেশি রোজা রাখতেন। তো এই সময় শাবান মাসের রোজা রাখা যেতে পারে। আবার যারা পূর্বের রোজা কাজা করেছেন তারা কাজা রোজা আদায় করতে পারেন।
নিজের সন্তান এবং পরিবারের সদস্যদের সময় দেবে। তাদের সঙ্গে গল্প করবে এবং তাদের কথা শুনবে। রান্না-বান্না, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ ঘরের কাজে নারীদের সাহায্য করবে।
তথ্য সূত্রঃ৪ এপ্রিল. ডেইলি পাকিস্তান

শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২০

মুরসিকে সরাতে ইসরাইলের ভূমিকা ছিল : ইসরাইলি জেনারেল

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ মিসরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে ইসরাইলের জোরালো ভূমিকা ছিল বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের একজন সামরিক কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, মুহাম্মদ মুরসির ক্ষমতায় থাকার সাথে ইসরাইলের নিরাপত্তা প্রশ্ন জড়িয়ে যাওয়ায় এই কাজ করা হয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরয়িহ ইলদাদ স্থানীয় এক পত্রিকা ‘ম্যারিভ’-এ প্রকাশিত নিবন্ধে এই তথ্য প্রকাশ করেন। ‘দ্য আউটব্রেক অব দ্য জানুয়ারি রেভ্যুলেশন’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে তিনি বলেন, মিসরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ইসরাইল মুসলিম ব্রাদারহুডের মানুষ হিসেবেই মূল্যায়ন করত। কারণ, তিনি ইসরাইলের সাথে সম্পাদিত শান্তিচুক্তি বাতিল এবং সিনাই উপত্যকায় সেনা উপস্থিতি বাড়িয়েছিলেন, যা ইসরাইলকে ভীত করে তোলে। ফলে ইসরাইল দ্রুত ও সক্রীয়ভাবে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং আবদুল ফাত্তাহ সিসিকে ক্ষমতায় আনার ব্যবস্থা নেয়। এই ক্ষেত্রে ওবামার মার্কিন সরকার কোনো আপত্তি করেনি।
ইলদাদ বলেন, ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি-যা ৪০ বছর আগে স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং দীর্ঘ দিন টিকে আছে- তা ভেঙে দেয়া হলে তা হতো সব ইসরাইলির প্রত্যাশার বিপরীত। এটা এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিকেও বিঘিœত করত। আমরা আরব ও ফিলিস্তিনিদের সাথে আরেকটি ধর্মযুদ্ধে জড়াতে চাই না।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৯ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির ৪০ বছরপূর্তিতে জার্মানির কাছ থেকে মিসরের সাবমেরিন কেনার চুক্তিকেও বিশেষ বার্তা হিসেবে গ্রহণ করে ইসরাইল। ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির ৪০ বছর পর বলতে হচ্ছে, ইসরাইলিরা কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে লড়াই করছেন। ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে ইলদাদ বলেন, শত্রু ভাবাপন্ন আরব রাষ্ট্রের সাথে এমন চুক্তি এটাই প্রথম। যে দেশটি ছিল সবচেয়ে বড় ও ভয়ঙ্কর।
সূত্র : মিডলইস্ট মনিটর
(Memory post)

আবেগ দিয়ে ধর্ম চলে না!! অনুভূতির দরকার হয়।


বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ১৯৯৬ সালের ঘটনা। তখন হজ্জ চলছিল। হজ্জ চলার সময় মিনা এলাকায় হঠাৎ করে আগুন ধরে যায়। ধীরে ধীরে আগুনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ঘটনার এক পর্যায়ে পুলিশ হাজীদের নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার অনুরোধ করতে থাকে।
কিন্তু একজন হাজী পুলিশের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে। তিনি হাজীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার বলতে থাকেন, ‘ভাইসকল, আমরা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে মিনায় উপস্থিত হয়েছি। আপনারা আল্লাহর মেহমান। আপনারা সূরা ইউনুস পড়ুন। দেখবেন, আগুন আপনাদের কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না।’
কিন্তু এরপর আগুনের তিব্রতা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে মানুষ তাঁবু ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে। কিন্তু সেই হাজী পুনরায় বলতে শুরু করেন, ‘আপনারা কেউ স্থান ত্যাগ করবেন না। আপনারা আল্লাহর মেহমান। আগুন আপনাদের কিছুই করতে পারবে না।’
পরের দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেই আগুনে প্রায় সব তাঁবু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেই হাজীর কথা শুনে সেখানে অবস্থান করলে- কী ঘটতো অনুমান করতে পারছেন? (সূত্র: মুফতি ইসমাইল মেনক- এর লেকচার থেকে সংগৃহিত)
দ্বিতীয় আর একটা ঘটনা বলি। নাসা যখন ঘোষণা দেয়, তারা চাঁদে মানুষ পাঠাবে, তখন একদল মানুষ নাসাকে চ্যালেঞ্জ করে বসে। তারা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত নিজেদের মত ব্যাখ্যা করে বলে, ‘কুরআনের ভ্যাষ্যনুসারে মানুষের পক্ষে চাঁদে যাওয়া সম্ভব নয়। আর যদি মানুষ চাঁদে পৌঁছাতে সক্ষম হয় তাহলে কুরআন মিথ্যা হয়ে যাবে।’
অনেক আলেম উপরোক্ত বক্তব্যের সাথে ঐক্যমত পোষণ করলেও, আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী এই বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘যদি সত্যিই চাঁদে মানুষ যেতে পারে, তখন কী হবে? কেউ নিজের মত করে কুরআন ব্যাখ্যা করে, কুরআন সত্য না মিথ্যা এই চ্যালেঞ্জ করার অধিকার রাখে না। আর কুরআনে এমন কোনোও কথা বলা হয়নি যে, মানুষ চাঁদে যেতে পারবে না।’
তবে তৎক্ষনাত বেশ কিছু আলেম আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী সাহেবের সমালোচনা করেন। কেউ কেউ তাঁকে ব্যক্তিগতভাবেও আক্রমন করেন। কিন্তু কিছুদিন পর যখন মানুষ সত্যিই সত্যিই চাঁদে গেল, তখন স্পষ্ট হয়ে গেল আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভীই ইসলামের প্রতি সুবিচার করেছেন। আর বাদ বাকিরা অতি আবেগ দেখাতে গিয়ে ইসলামেরই সর্বনাশ ঘটাতে যাচ্ছিলেন।
(ঘটনাসূত্র: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত)
করোনা ভাইরাসের এই সময়ে যখন জনসমাবেশ এড়িয়ে চলার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে, তখন আশ্চর্যজনকভাবে মসজিদগুলোতে নামাজিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন প্রতি ওয়াক্ত নামাজেই এমনকি ফজরের নামাজেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নামাজির উপস্থিতি পরিলক্ষিত করা যাচ্ছে। অথচ আলেমদের মতানসুারে এই সময়টা ঘরে নামাজ পড়াই উত্তম। এমনকি আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী সাহেবও মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
কিন্তু কতিপয় নামাজি বলছেন, ‘আল্লাহ ভরসা। আল্লাহর ঘর মসজিদে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাবে না। আর আল্লাহ যদি চান তবে আক্রান্ত হবো। এসব নিয়ে এতো ভাবনার কিছু নেই। তাকদিরে থাকলে আর কী করা যাবে!’
সেই তাকদিরের উপর ভরসা করেই ভারতে তাবলীগের মারকাজে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল। ফলে যা হবার তা-ই হয়েছে। ইতোমধ্যে তাবলীগের প্রায় ৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে আরও অনেক।
তাকদিরে অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে। সাথে উটের দড়িটাও কোমরে বেঁধে রাখতে হবে। আর এটা আল্লাহর রাসূল নিজেই বলেছেন।
তাকদিরে যখন এতোই বিশ্বাস, তখন নিজের বাচ্চাকে খেলার জন্য হাতে ধারালো ছুরি দেন না কেন? বাচ্চারা আগুন নিয়ে খেলতে চাইলে, নিষেধ করেন কেন? তাকদিরে থাকলে দূর্ঘটনা ঘটবে! অতএব এটা নিয়া চিন্তার কিছু নেই। তাই না?
# Collected.

শুক্রবার, ৩ এপ্রিল, ২০২০

বিভিন্ন সময় হজ্ব বাতিল করা হয়েছিল। এবারও করোনার কারনে বন্ধ হবার সম্ভাবনা রয়েছে।এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে আল্লাহর রহমত কামনা করি।

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে, আব্বাসীয়দের সময়, ইসমাঈল বিন ইউসুফের মক্কা আক্রমণের কারণে।
২) ৯৩০ সালে কট্টর শিয়া গ্রুপ কারমাতিদের আক্রমণে সে বছর ৩০,০০০ হাজি শহিদ হয়েছিল। তারা হাজিদেরকে হত্যা করে তাদের লাশ জমজম কুপে ফেলে দিয়েছিল। ফিরে যাওয়ার সময় তারা সাথে করে হাজরে আসওয়াদ বাহরাইনে নিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে হাজরে আসওয়াদ পুনরুদ্ধার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এক দশক হজ্ব বন্ধ ছিল।
৩) ৯৮৩ থেকে ৯৯০ সাল পর্যন্ত হজ্ব বাতিল হয়েছিল রাজনীতির কারণে। ইরাক ও সিরিয়া ভিত্তিক আব্বাসীয় খিলাফত এবং মিসর ভিত্তিক ফাতেমীয় খিলাফতের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে সেবার ৮ বছর পর্যন্ত হজ্ব বন্ধ ছিল।
৪) শুধু যুদ্ধ-বিগ্রহ না, মহামারীর কারণেও হজ্ব বাতিল হয়েছিল। প্রথমে ১৮১৪ সালে হেজাজ প্রদেশে প্লেগের কারণে ৮,০০০ মানুষ মারা যাওয়ায় হজ্ব বাতিল করা হয়।
৫) ১৮৩১ সালে ভারত থেকে যাওয়া হজ্বযাত্রীদের মাধ্যমে মক্কায় প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে এবং চারভাগের তিনভাগ হাজী মৃত্যুবরণ করে। ফলে সে বছর হজ্ব বাতিল করা হয়। এছাড়াও ১৮৩৭ থেকে ১৮৫৮ সালের মধ্যে প্লেগ এবং কলেরার কারণে তিন বারে মোট ৭ বছর হজ্ব বন্ধ ছিল।

এবারও যদি হজ্ব বন্ধ হয়, সেটা হবে খুবই দুঃখজনক একটা ঘটনা। কিন্তু একইসাথে এটাও লক্ষ্যণীয়, অতীতেও হজ্ব বাতিল হয়েছিল। ইসলাম অবাস্তব কোনো ধর্ম না, এলিয়েনদের জন্য আসা ধর্ম না। এটা মানুষের জন্য আসা ধর্ম। এবং মানুষের সাধ্যের বাইরে এখানে কিছু করতে বলা হয়নি।
তথ্যসূত্র: হারাম শরিফের ওয়েবসাইট, মিডল ইস্ট আই, টিআরটি, দ্য নিউ আরব।

করোনা সংকট: বিল গেটসের কিছু হৃদয়স্পর্শী কথা

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের মধ্যে খুবই পরিচিত নাম বিল গেটস। বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের মহামারী চলছে। এতে বিধ্বস্ত বিশ্ব মানবতা, ভেঙে পড়ছে অর্থনীতির মেরুদণ্ড। করোনা সংকটের এই পরিস্থিতিতে শীর্ষ ধনী বিল গেটস কিছু হৃদয়স্পর্শী কথা বলেছেন। বিল গেটস বিশ্বাস করেন, ‘এমনি সময়ে আমি খুবই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই জগতে যাই ঘটে তার পেছনে একটা পারমার্থিক বা আধ্যাত্মিক কারণ রয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ে আমার একান্ত অনুভবগুলো আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চাই।’
১. আমাদের সংস্কৃতি, ধর্ম, পেশা, আর্থিক অবস্থা, খ্যাতি ইত্যাদির পরও প্রকৃতগতভাবে আমরা একই সমান। যে যত বড় খ্যাতিবান কিংবা ক্ষমতাবান হোন না কেন- যে কোনো সময় আপনি কঠিন সংকটে পড়ে যেতে পারেন। ভাইরাস এই জিনিসটিই আমাদের খুব ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছে। যদি আপনি বিশ্বাস না করেন- তবে টম হ্যাংকস অথবা প্রিন্স চার্লসকে দেখেই তা বুঝতে পারবেন।
২. আমরা সবাই একে অপরের সাথে দারুণভাবে সম্পৃক্ত। জগতের সব কিছুই একটি অনুবন্ধনে আবদ্ধ। সীমান্তরেখা গুলো আসলেই মিথ্যা। এগুলোর মূল্য কত কম তা এই ভাইরাস বুঝিয়ে দিয়েছে। আপনারা ভালো করেই দেখেছেন- সীমান্ত পাড়ি দিতে ভাইরাসের ভিসা, পাসপোর্ট কোনো কিছুই লাগে না।
৩. গৃহের স্বল্প সময়ের এই বন্দিত্বকে যদি আপনার নিপীড়ন মনে হয়- তবে একটু ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করুন- যারা সারা জীবন ধরে এমন নিপীড়নের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে-তাদের জীবনটা কেমন।
৪. নিজের স্বাস্থ্যের কি যে মূল্য এটা এই ভাইরাস বুঝিয়ে দিয়েছে। অথচ এই স্বাস্থ্যটাকে আমরা কত অবহেলা করি। নানা রকমের ক্যামিকেল যাত খাদ্য না খেলে, পানীয় পান না করলে আমাদের চলেনা। আমরা যদি আমাদের শরীরের যত্ন না নেই। তবে অবশ্যই আমরা অসুস্থ হব।
৫. ভাইরাস বুঝিয়ে দিয়েছে- জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। যে কোনো সময় জীবনের ইতি হয়ে যেতে পারে। এই সংক্ষিপ্ত জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে বয়ষ্ক আর শিশুদের বেশী করে যত্ন নেয়া। এদের এক দল পৃথিবী দেখার জন্য আরেক দল পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। তাই, এদেরকে বেশী করে সময় দিতে হবে। জীবন বাঁচাতে টয়লেট রোল কিনে ঘরে ভর্তি করে ফেলাটাই জীবনের উদ্দেশ্য নয়।
৬. ভাইরাস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে- কত স্বার্থপর আমরা। জড়বাদী, ভোগবাদি আর বিলাসের সমাজই আমরা তৈরি করেছি। সংকটময় মুহুর্তে বোঝা যায়- জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো হচ্ছে- খাদ্য, পানি আর ওষুধ। দামি বাড়ি, গাড়ি আর লাক্সারিয়াস রিসোর্ট নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বাড়ি, গাড়ি একজন মানুষকে বাঁচাতে পারে না। যেমন পারে- ওষুধ, খাবার আর পানি।
৭. ভাইরাস দেখালো নিজের পরিবার আর আপনজনকে আমরা কত অবহেলা করি। আমরা যখন নিজ থেকে ঘরে ফিরিনি। আপনজনদের সময় দেইনি। ভাইরাস জোর করেই আমাদের প্রিয়জনদের কাছে ফেরালো। প্রিয়জনদের সাথে নতুন করে দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করার সুযোগ তৈরি করে দিলো।
৮. আমাদের আসল কাজ কারো না কারো চাকর হয়ে শুধু চাকুরি করাই নয়। এই জন্যই আমাদেরকে সৃষ্ট করা হয়নি। মানব সৃষ্টির আসল কাজ হলো- মানুষ মানুষের পাশে থাকবে, মানুষ মানুষকে রক্ষা করবে, মানুষ মানুষের কাছ থেকে উপকৃত হবে।
৯. ক্ষমতার দম্ভ, খ্যাতির দম্ভ, বিত্তের দম্ভ এসব কিছুই নিমিষেই যে কোনো সময় চুপসে যেতে পারে। বড় কোনো শক্তির কাছে নয়। অতি ক্ষুদ্র এক আণুবীক্ষণিক ভাইরাসের কাছে। পুরো দুনিয়াটাকে অচলাবস্থায় নিয়ে যেতে পারে খালি চোখে অদেখা এক ভাইরাস।
তাই আমাদের সব রকমের দম্ভকে যেন আমরা সবসময় নিয়ন্ত্রণের মাঝেই রাখি।
১০. আমাদের ইচ্ছাশক্তির পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। আমরা ভালো হবো না মন্দ হবো, স্বার্থপর হবো না পরার্থপর হবো, ভালোবাসবো না ঘৃণা করবো, সাহায্য করবো না ছিনিয়ে নেব, দান করবো না গ্রহণ করবো-সাহায্য করবো না নিপীড়ন করবো- এসব কিছু করার পূর্ণ স্বাধীনতা সবারই আছে। সংকট আমাদের আসল স্বরুপ বের করে দেয়।
১১. আমরা সাবধান হবো নাকি শুধুই শংকিত হবো-এটাও ভাইরাস আমাদের মনে করিয়ে দেয়। এরকম অবস্থা অতীতেও হয়েছে। সুতরাং মনে রাখতে হবে পৃথিবীর কোনো সংকটই দীর্ঘস্থায়ী নয়। জীবন আবর্তিত হতে থাকবেই। প্রতিটি সংকটের পর সুসময় আসবেই। এই সংকটও কেটে যাবে। পৃথিবীর এখানেই শেষ নয়। কাজেই অতিরিক্ত আতঙকগ্রস্থ হয়ে আমরা যেন নিজেদের আরো বেশী ক্ষতি করে না ফেলি।
১২. আমরা যেন নিজেদের শুধরাতে পারি। শিক্ষা নিতে পারি-এটা পৃথিবীর শেষ নয়। বরং এক নতুন পৃথিবী গড়ার সূচনা।
১৩. যে হারে দ্রব্য রাখার সেলভস থেকে টয়লেট রোল ফুরিয়ে গেলো। ঠিক একইভাবে আমাদের অক্সিজেন দান করা অরণ্য ফুরিয়ে যাচ্ছে। এই অরণ্যকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। প্রকৃতিকে অসুস্থ করে আমরা কোনোদিনই সুস্থ হতে পারব না। প্রকৃতিকে নিজের গৃহ মনে করতে হবে। আর ঘর অসুস্থ হলে আমরাও অসুস্থ হব।
১৪. এই ভাইরাস আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে- আমরা যেন ভুলে না যাই। শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের সংশোধন করি। অনেকেই করোনা ভাইরাসকে গ্রেট ডিজেস্টার হিসাবে দেখছেন। আমরা এটাকে আসলে গ্রেট কারেক্টর হিসাবেই দেখতে চাই।
ভাষান্তর: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ক্লাফলিন এবং গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, সাউথ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়: ইসলামী দৃষ্টিকোন: প্রফেসর ড. মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন তালুকদার

 বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ০৪ এপ্রিল ২০২০
তোমার ওপর তোমার শরীরেরও অধিকার রয়েছে, (বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৮)
==========
আতংকিত না হয়ে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হওয়া: কেননা আল্লাহর হকুম ছাড়া কোন বিপদ আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না। তিনি বলেন আল্লাহ যা আমাদের জন্য লিপিবদ্ধ করেছেন তা ছাড়া কোন কিছুই আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আল্লাহর উপড় মুমিনের নির্ভরশীল হওয়া উচিৎ।" (সূরা আত্ তাওবা, ৫১)
=============
লক ডাউন: যে এলাকায় মহামারি আক্রান্ত হয় সে এলাকায় প্রবেশ ও বাহির বন্ধ করে দেয়া। এ সম্পর্কে রাসূল (সঃ) বলেন "যদি তোমরা শুনতে পাও কোন জনপদে প্লেগ বা অনুরুপ মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে তবে তোমরা তথায় গমন করবে না।
আর যদি তোমরা যে জনপদ অবস্থান করছো তথায় তার প্রাদুর্ভাব ঘটে তবে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না।( বুখারী, হাদীস নং ৫৩৯৬)
============
আইসোলেশন ( Isolation) : মহামারী রোধে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে পৃথক রাখাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আইসোলেশন বলা হয়। রাসূল (সঃ) এ সম্পর্কে ঘোষনা করেছেন, অসুস্থের কাছে নেয়া হবে না। (বুখারী, ৫৭৭১ ও মুসলিম, ২২২১)
============
হোম কোয়ারেন্টাইন (guarantine): সুস্থ ব্যাক্তি মহামারীতে আক্রান্তের আশংকায় জনবিচ্ছিন্ন থাকাকে কোয়ারেন্টাইন বলা হয়। বিভিন্ন হাদীসে এভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার ফযিলতল বর্ণিত হয়েছে। যেমন নবীজি (সঃ) বলেন কোন বান্দা যদি মহামারী আক্রান্ত এলাকায় থাকে এবং নিজ বাড়িতে ধৈর্য সহকারে সওয়াবের নিয়তে এ বিশ্বাস বুকে নিয়ে অবস্থান করে যে, আল্লাহ তাকদিরে যা চূড়ান্ত রেখেছেন তার বাইরে কোনো কিছু তাকে আক্রান্ত করবে না, তাহলে তার জন্য রয়েছে শহীদের সমান সওয়াব। ( বুখারী, ৩৪৭৪ ও মুসনাদে আহমদ, ২৬১৩৯)
===============
মুসাফাহ ও কোলাকুলি এড়িয়ে চলা: কেননা এর মাধ্যমে সংক্রামণের ভয় থাকে। নবীজি (সঃ) সাকিফের প্রতিনিধি দলের মধ্যকার কুষ্ঠ রোগীকে হাতে হাতে বাইয়াত না দিয়ে লোক মারফত বলে পাঠান, তুমি ফিরে যাও। আমি তোমার বাইয়াত নিয়ে নিয়েছি। " ( মুসলিম, ২২৩১)
==============
সার্বিক পরিচ্ছন্ন থাকা: কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মুমিনদেরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। "আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন। " সূরা আল-বাকারা, ২২২), হাদীসে পবিত্রতাকে ঈমানের অংগ বলা হয়েছে। শরীয়াতের বিভিন্ন বিধানকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম নির্ধারণ করা হয়েছে:
===============
ওজুর মাধ্যমে মানুষের শরীরের অনাবৃত্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা হয়:
মেসওয়াকের মাধ্যমে মুখের সব ধরনের জীবানু ধ্বংস হয়:
সামগ্রিকভাবে সর্বক্ষণ ও বিশেষত সালাতের পরিধেয় কাপড় পরিচ্ছন্ন থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে,। আল্লাহ বলেন: """ তোমরা কাপড় পরিস্কার রাখো। " (আল-মুদ্দাচ্ছির, ৪)
================
গুজবে কান না দেয়া ও গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকা: ইসলামে যাচাই ছাড়া কোন তথ্য গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন,
" কোন অসমর্থিত ব্যক্তি কোন খবর দিলে তোমরা তা যাচাই করো। (সূরা আল- হুজুরাত: ৬) এ সমপর্কে রাসূল (সঃ) বলেন, যাচাই না করে শোনা খবর বিশ্বাস করা মিথ্যুক হওয়ার নামান্তর। " ( মুসলিম, ৫)
================
 ঘরে নামায আদায় করা: আপদকালীন অবস্থায় রাসূল (সঃ) সাহাবীগণকে বাড়িতে নামায আদায়ের নির্দেশ দেন। তিনি মুআজ্জিনকে আজানের মধ্যে বলতে বলেন, আলা সাল্লু ফী রিহালিকুম" (তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে নামায আদায় কর) ( বুখারী ৬৬৬, মুসলিম ৬৯৭) তাঁর ইন্তিকালের পরে সাহাবীগণও একইভাবে আমল করতেন। সহীহ বুখারীতে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) থেকে এর প্রমাণ বর্ণিত হয়েছে যে তিনি মুয়াজ্জিনকে নির্দেশ দেন আজানের "সাল্লু ফী বুয়ূতিকুম" (তোমরা বাড়ীতে সালাত আদায় কর) অংশটি যোগ করার জন্য। (বুখারী ৬৬৮, মুসলিম ৬৯৯) ইসলামী শরীআর উদ্দেশ্য ও মহামারীর গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় মিসর, সৌদীআরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ফিকহ কমিটি ও ইসলামী ফাউন্ডেশন মসজিদে মুসল্লাীদের উপস্থিতি সর্বনিম্ম পর্যায়ে নিয়ে আসার পক্ষে মত দিয়েছেন। বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রীও সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে সকলকে ঘরে ইবাদাত করার প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
===================
 গরিব-আসহায় ও নিম্ম আয়ের লোকদের সাহায্যে এগিয়ে আসা: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ঘোষিত
লকডাউনের এ দিনগুলোতে গরিব- অসহায় ও নিম্ম আয়ের মানুষের প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করা বিত্তবানবানদেরওপর আবশ্যক। এ মহৎ গুণের প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন, "অথবা খাদ্য দান করা দুর্ভিক্ষের দিনে,ইয়াতীম আত্মীয়-স্বজনকে,অথবা ধুলামলিন মিসকীনকে ।"( সূরা আল-বালাদ,১৪-১৬)
===============
ভাইরাস প্রতিরোধে ও জনগণের নিরাপত্তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা: ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম সরকার জনকল্যাণের বিবেচনায় কোন নির্দেশনা দিলে এবং তা শরীয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক না হলে তা মান্য করা অপরিহার্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন, "তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর আনুগত্য করো রাসূলের ও তোমাদের নেতৃস্থানীয়দের। " (সূরা আন-নিসা, ৫৯) এ সময়ে আমাদের উচিৎ বেশি বেশি (১) তওবা, (ইস্তেগফার, (৩) নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামায, (৪) কুরআন তিলাওয়াত, (৫) নফল রোযা, (৬) তাহাজ্জুদ নামায ও (৭) রাসূলের (সঃ) এর দুরুদ পাঠ করা।
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন তালুকদার, আরবী বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য, শরীয়াহ

পবিত্র ঈদ-উল-আযহা’র শুভেচ্ছা.

  বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ  প্রতিবছর ঈদ আসে আমাদের জীবনে আনন্দ আর সীমাহীন প্রেম প্রীতি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে। তাই এ দিন সকল কালিমা আর কলুষতাক...