.
নিজেকে আমার নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার প্রয়োজনবোধ করি না। গোটা পৃথিবী আজ আমাকে নিয়ে কথা বলছে, গৃহবন্দী আজ আমারই জন্যে, অবিরাম দুশ্চিন্তা আজ আমাকে ঘিরে। তোমাদের অধিকাংশের ন্যায় নষ্ট করার মতো সময় আমার হাতে নেই। তাই মূল কথায় যাচ্ছি, আজ নিজের সম্বন্ধে তোমাদের এমন কিছু বিষয় শেয়ার করতে চাই, যা মিডিয়া ধারণ করবে না কোনো দিন।
.
মানুষের মাঝে ভেদাভেদ করতে আমি জানি না। আমি চিনি না কে যুবক আর কে বৃদ্ধ, কে অসুস্থ আর কে সুস্থ, কে নেককার আর কে বদকার। ধ্বংসাত্মক বলে আমায় দোষীয়ো না তোমরা। আমি স্রেফ মহান রবের নির্দেশের পাবন্দি করছি, যিনি আমাকে করে দিয়েছেন লাগামছাড়া।
.
মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর যালেম শাসকদের নির্যাতনের স্টিমরোলার আজ আমিই থামিয়ে দিয়েছি, ব্যস্ত করে রেখেছি আজ তাদের ভিন্ন কিছুতে। আমিই একুশ শতকের ফিরআউনদের হতবিহবল করে তুলেছি এবং গুঁড়িয়ে দিয়েছি তাদের প্রত্যেকের অহংকারী মেরুদণ্ড। আমিই বন্ধ করিয়েছি মদ, যিনা-ব্যভিচার, আর জুয়া-মাদকের আড্ডাখানা। সুদী কারবার-কারীদের ভীত সন্ত্রস্ত করে রেখেছি আমিই। দরজার ওপারে থাকা প্রত্যেক অবিশ্বাসীকে আমিই হয়রান করে রেখেছি, ফলে এতকাল সে যত পক্ষ নিয়ে দাঁড়াত, আজ সবই তার কাছে দিকহারা। আমিই সেই ভাইরাস, ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে প্রত্যেক পাপাচারীর মনে এবং বাধ্য করেছে তাদের আফসোস আর অনুশোচনা করতে। নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিফল আমিই। আর এ জন্য আমি গর্ববোধ করি, কোনো দুঃখ নেই আমার মনে। বরং শক্ত হয়ে পড়া মানবতার সেই অন্তরগুলোর জন্যই লজ্জা, উপদেশ-গ্রহণে যাদের প্রয়োজন হলো আমার মতো বান্দার।
.হ্যাঁ, তোমরা ঠিকই ধরেছেন।
.
আজ আমার কারণে মসজিদের দরজাগুলো বন্ধ। আর এটাই আমার দুঃখ, তবে এটা আমার রবেরই মর্জি, নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞাতা। আশা করি আজ তোমরা অনুধাবন করতে পারবে, জামাতে সালাত আদায়ের কী মহত্ত্ব, ফেরেশতাদের সাথে বসতে পারা কত বড় সৌভাগ্যের, এতকাল তোমরা উপভোগ করছিলে শোকর ছাড়া। কেন? কেন আমাকেই তোমাদের প্রয়োজন হলো এই বিষয়টি বোঝাতে?
.
তোমাদের গোটা জীবনযাত্রা আজ আমার কারণে দেয়ালে পীঠ ঠেকে গেছে; দুর্বল, অণুবীক্ষণ যন্ত্র বিনা যাকে দেখাই যায় না, আল্লাহর এই নীরব সৃষ্টির কারণে। তাহলে কেমন হতো, আমাকে না পাঠিয়ে যদি আমার ভাইদের পাঠাতেন তিনি? গোটা শহরকে উল্টে দিতেন, যেভাবে দিয়েছেন কওমে লূতকে? কিংবা আগুনের বৃষ্টি যদি বর্ষণ করতেন, যেভাবে করেছিলেন কওমে শুয়াইবের ওপরে? অথবা জমিনকে যদি নির্দেশ দিতেন তোমাদের ধসিয়ে দিতে, যেভাবে দিয়েছিলেন কারুনকে?
.আজকের এই পরিস্থিতির জন্য আমি দায়ী নই। আমার রব বলেছেন, তোমরাই দায়ী।
.
‘সুতরাং ওদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ অপরাধের জন্য পাকড়াও করলাম; ওদের কারও প্রতি প্রেরণ করলাম পাথর বর্ষণকারী ঝড়, কাউকে আঘাত করল মহাগর্জন, কাউকে আমি ধসিয়ে দিলাম মাটির নিচে এবং কাউকে মারলাম ডুবিয়ে। আল্লাহ তাদের প্রতি কোনো যুলুম করেন নি; অধিকন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছে।’ [সূরা আনকাতবূত, ২৯: ৪০]
.আমাকে ভয় করো না, বরং তাঁকে ভয় করো, আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন।
.
দিশেহারা হয়ে যেও না এই ভেবে, কীভাবে আমার থেকে বাঁচবে। বরং ভাবো, কীভাবে তাঁর নিকটবর্তী হওয়া যায়, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তোমাদের কাছে।
.
আমি সহ গোটা সৃষ্টি জগত তাঁরই দয়ার অনুগামী, তাঁরই ক্ষমতার অধীন, তাঁর সাহায্য বিনা আমরা অক্ষম সকলেই। আমার ভাগ্য তাঁরই হাতে, তাঁর ইচ্ছাই আমার কাছে চির-ধার্য, আর আমি সিজদাহ করি শুধুমাত্র তাঁকেই। অতএব আমাকে নিয়ে কিংবা অন্য কিছু নিয়ে তোমাদের অন্তরগুলো ব্যতিব্যস্ত করে রেখো না। আল্লাহর গুণকীর্তন করো এবং তাঁর প্রতি সুধারণা রাখো।
.
তোমাদের চাইতে আমি নিজেকে ভাল জানি। যারা নেককার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করছে, আল্লাহর কাছে তাদের জন্য উত্তম ফলাফলই অপেক্ষা করছে। আশা করা যায় তারা শহীদের মর্যাদা পাবে। কিন্তু তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানের ব্যাপারে গাফেল থেকে মরছ, লক্ষ্যহীন জীবন কাটিয়েছ, তাওবাহ করতে বিলম্ব করেছ, খুব শীঘ্রই তোমরা বুঝতে পারবে মৃত্যু আসল সমস্যা নয়, বরং সবচেয়ে ক্ষীণ সমস্যাগুলোর একটি।
.তোমাদের প্রতি দয়াপরবশ আজ আমি মুখ খুলেছি, অতএব শেষবারের মতো জানতে চাইব:
.
তোমরা কি তাওবাহ করবে?
.
জীবনের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য নিয়ে ভাববে? লক্ষ্য নিয়ে জীবন যাপন করবে?
.
তোমরা কি এ কথা দিতে পারো, প্রত্যেক পাপকে তোমরা বুকফাটা অনুশোচনা দিয়ে বিদায় জানাবে?
.
তোমাদের ক্ষণিকের অতিথি, নিরেট উপদেশ দানকারী, আল্লাহর অধম বান্দা,
.
‘করোনা’
.
-----------
উস্তাদ আলী হাম্মুদার পেইজ থেকে
অনুবাদ: Wafilife এ্যাডমিন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন