বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ১৯৪৩ সালে বাংলায় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সেই দুর্ভিক্ষে প্রায় ৪০ লাখ লোক মৃত্যু বরণ করেছিলেন।
করোনা ভাইরাস নিয়ে যে ধরনের আতঙ্ক ও অচল অবস্থা বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তাতে আরেকটি দুর্ভিক্ষ আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
আমার এই আশঙ্কা না ফলুক এটাই প্রত্যাশা করি। কিন্তু তারপরও কেন যেন মনে হচ্ছে আমরা আরেকটি দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
করোনা ভাইরাসের ক্ষতি পোষাতে কানাডা সরকার বিশাল প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে। সৌদি আরব আজকে ১২০ মিলিয়ন রিয়ালের বিশাল প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছে। ঐ সমস্ত দেশের আর্থিক সক্ষমতা যেমন আছে ঠিক তেমনি সাধারণ জনগণের আচরণগত দিকগুলো আমাদের চেয়ে অনেক অনুকূলে।
বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার কথা নয় কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের আচরণই দুর্ভিক্ষ ডেকে আনবে। কারণ:
ক. আমরা আতঙ্ক আসার আগেই আতঙ্কিত হই বেশি। রোজা আসার আগে যেভাবে বাজারে হুমরি খেয়ে পড়ি এটা অন্য কোথাও নেই। সংকট আসার আগেই সবাই বাজারে এমনভাবে আচড়ে পড়ি যেন আজ না কিনলে কাল আর কিনতে পাব না এই অবস্থা!
খ. আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা মাশা আল্লাহ! দুনিয়ায় এই ধরনের ব্যবসায়ী আর পাওয়া যাবে না। এরা সংকটের জন্য অধীর আগ্রহে থাকে। যখন কোন সংকট তৈরি হওয়ার আশংকা থাকে তখনই এরা সকল পন্য কুক্ষিগত করে বাজারকে অস্থির করে ফেলে। একদিনেই তারা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান।
গ. এ দেশের সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রন না আছে জনগণের ওপর না আছে ব্যবসায়ীদের ওপর না আছে প্রশাসনের ওপর। সরকার যতই গরম বুলি আওড়ায় তাতে কেউ কান লাগায় না, পরোয়া করে না।
ঘ. কারো কোন দায়বদ্ধতা নেই। সবাই লাগাম হীন। যে যেখান থেকে পারছে নিজের আখের গুছানোর মানসিকতা এখন ভর করেছে প্রায় সকলের মধ্যে।
একটা উদাহরণ দেই:-------------------------
গত তিন দিন আগে ফুটপাতে ভালো মানের পিয়াজ ৪০/৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। তার মানে পিয়াজের গুদাম উপচে পড়ছে এখন। তাই ব্যবসায়ীরা পিয়াজ ছেড়ে দিয়েছেন। দামও নাগালে চলে এসেছিল। কিন্তু সেই পেয়াজের দাম এখন আবার ৮০/৯০ টাকার দিকে চলে গেছে। কারণ বুঝতেই পারছেন। করোনার আতঙ্কে জনগণ পিয়াজ, ডাল-চালের ওপর হুমরি খেয়ে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা দেখলেন এখনই সুযোগ। দাম বাড়িয়ে দিলেন তারা। আজকে চালের দোকানে গেলাম। দোকানদার বললেন, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা চাল ছাড়ছে না। আগে আমাদের হাত পা ধরে চাল দিত ৩৫০ বস্তা একবারে। এখন আমি সারা খাতুনগঞ্জ ঘুরে ঘুরে ১২০ বস্তা চাল এনেছি। গেলাম কাচা বাজারে । মাছ বিক্রেতারা মিছিল দিয়ে বলছে: মরার আগে খাইয়া লন.......
যাইহোক, একটু বাস্তব অবস্থা কল্পনা করে দেখুন। করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপি যে মন্দা দেখা দিবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। অন্যান্য ধনী দেশ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে সামাল দিতে পারলেও আমাদের মত গরীব দেশ তা পারবে না।
১৯৪৩ সালের যে মহা দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তার অনেকগুলো কারণ ছিল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ব্যবসায়ীদের মজুদদারী এবং অতি আতঙ্কিত জনগণের অতিরিক্ত পণ্য ক্রয়।
এখন একটু চিন্তা করুন। চীন, ভারত ও মায়ানমার থেকে যখন পুরোপুরি আমদানি বন্ধ হবে। আমাদেরকে যখন নিজেদের পণ্যের ওপর নির্ভর করতে হবে তখন কী হবে? একদল আতঙ্কিত লোক বাজারের সকল পণ্য কিনে ঘর বোঝাই করবে। আরেকদল মুনাফাখোর ব্যবসায়ী পয়সা লোটার ধান্ধায় পণ্য মজুত করে দাম বাড়াবে। ফল হিসেবে আমরা আরো একটি মহা দুর্ভিক্ষ দেখব! তবে সেই দুর্ভিক্ষ হবে কঠিন থেকে আরো কঠিনতর। কেননা গোটা বিশ্বই একই সময়ে সংকটে থাকবে। বাংলাদেশ একা বিপদে থাকলে হয়ত কেউ দান খয়রাত নিয়ে এগিয়ে আসত। তখন তারা থাকবে নিজেদের ঘর সামলানোতে ব্যস্ত আমাদের হেল্প করবে কখন?
এখন উপায়?
উপায় আছে। আমাদের কাছেই আছে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের। আমাদের চরিত্র বদল করতে হবে। যতই রিউমার ছড়ানো হোক বাজারে হুমরি খেয়ে পড়া যাবে না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত এক ছটাক বস্তুও কেনা যাবে না। ব্যবসায়ীদেরও মানসিক পরিবর্তন জরুরি। উনাদের মানসিক বিকার না গেলে আমরা বাচতে পারব না।
উনাদের অতি লোভে যদি দুর্ভিক্ষ হয়েই বসে তখন কিন্তু তারাও ছাড়া পাবে না। দেশ গোল্লায় গেলে তাদের ধন দিয়ে কী হবে!
আল্লাহ আমাদের সুমতি দিন। মহামারীকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে ব্যবসা না করে মানুষের খেদমত করা যায় কিনা সেই মানসিকতা আল্লাহ দান করুন এই দোয়া করি।
হে আল্লাহ বাংলাদেশের মানুষকে তুমি মানুষ কর। ওদেরকে সহিহ বুঝ দাও। করোনা থেকে বাচাও। দুর্ভিক্ষ যেন আমাদের না পেয়ে বসে সেই ব্যবস্থা করে দাও.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন