বহু মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন, ও অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার ফসল আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম বা আই আই ইউ সি। বাংলাদেশের বিশেষকরে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের মানুষের ব্যাপারে সুখ্যাতি রয়েছে যে তাঁরা অধিক ধর্মপরায়ন। একটি কথা বলে রাখা ভাল যে, ধর্মপরায়নতা কোন রাজনৈতিক ওরিয়েন্টেশনের উপর নির্ভরশীল নয়। যে কেউ যে কোন যায়গা থেকে ধর্মচর্চা করতে পারেন।
১৯৯২ ইং সালের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন মতে ১৯৯৫ ইং সালে 'আই ইউ সি' প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তিতে নাম পরিবর্তন করে 'আই আই ইউ সি' হয়। সেই থেকে চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের প্রাণের প্রতিষ্ঠান এই আই আই ইউ সি। প্রচলিত সেক্যুলার ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা শেখার তেমন সুযোগ রাখা হয়নি। আর সার্বিকভাবে মানসম্পন্ন গ্রাজ্যুয়েট তৈরিতে আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন একের পর এক ব্যর্থ হচ্ছিল; কলুষিত রাজনীতির ভয়াল থাবায় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় দীনতা তৈরি হচ্ছিল; আর আমাদের সচেতন কোমলমতি ছেলেমেয়েরা যখন বিদেশে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে পারি জমাচ্ছিল - ব্রেইন ড্রেন হচ্ছিল তখনি আই আই ইউ সি নৈতিকতা ও মান সম্পন্ন গ্রাজ্যুয়েট তৈরির মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল।
এই মিশন দেশে বিদেশে দারুণভাবে সমাদৃত হয় ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। তাইতো তৎকালীন সৌদি পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পীকার শাঈখ ড. আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ, বিখ্যাত স্কলার ড. আব্দুল্লাহ মুসলেহ সহ আরও অনেকে আই ইউ সি ট্রাস্টের সাথে শুধু যুক্ত হওয়াই নয় বিভিন্ন দায়িত্ব পালনেও সম্মতি প্রদান করেন। আই আই ইউ সিকে আন্তর্জাতিক রুপ দেয়ার নিমিত্বে মালয়েশিয়ার নামকরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আই আই ইউ এম এর শিক্ষা ও পরিচালনা পদ্ধতিকে মডেল হিসেবে নেয়া হয়।
শহরের কোলাহল, হ্যাভি ট্রাফিক আর অপর্যাপ্ত একোমোডেশন এর কারনে শহরের বাইরে শান্ত-সবুজ পাহাড় ও সমুদ্র ঘেরা অপুর্ব, মনোহর প্রাকৃতিক পরিবেশে চট্টগ্রামের কুমিরায় আই আই ইউ সি এর স্থায়ী ক্যাম্পাসের পরিকল্পনা নেয়া হয়। বিশাল এক মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে, ইউনিভার্সিটি সিটি করার পরিকল্পনা ছিল আই আই ইউ সি'র। যায়গা কেনা হয়েছে প্রায় ৪৫ একর। এর মধ্যে কাতার সরকারের সহযোগিতায় গড়ে উঠে কমপ্লিটলি অটোমেটেড সেন্ট্রাল লাইব্রেরী। কুয়েতের ধর্ম ও ওয়াকফ মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে গড়ে উঠে সেন্ট্রাল মসজিদ ও সেন্ট্রাল অডিটোরিয়াম। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও অন্যান্য দেশের বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি বিল্ডিং ও হোস্টেল স্পন্সর করে এই স্থায়ী ক্যাম্পাসে।
অত্যন্ত সুনামের সাথে আই আই ইউ সি তাঁর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সরকারের প্রায় সকল রিকোয়ারম্যান্টের সাথে এর কমপ্লাইয়েন্স রয়েছে। সরকার মনোনীত উপাচার্য, উপ উপাচার্য, ও ট্রেজারার রয়েছে এখানে। বাংলাদেশে ১০৫ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯ম, ও সরকারী-বেসরকারী সব মিলিয়ে ১৫৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৭তম অবস্থানে রয়েছে আই আই ইউ সি। সারা বিশ্বের ২৯২৫৯ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আই আই ইউ সি'র অবস্থান ৪৫৫১ তম। আর এশিয়ার ১৪৩৬৭ এর মধ্যে আই আই ইউ সি'র অবস্থান ১৬১৩ তম। স্কোপাস ইন্ডেক্সড গবেষণা পাবলিকেশনেও বাংলাদেশে আই আই ইউ সি'র বেশ মজবুত অবস্থান রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষালাভ করে হাজার হাজার গ্রাজ্যুয়েট সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রেস্টিজিয়াস অর্গানাইজেশনে কর্মরত রয়েছেন।
এমতাবস্থায় আই আই ইউ সিকে যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা সর্বমহলের দায়িত্ব বলে মনে করি। আল্লাহ সহায় হওন।
Shariful Haque(Associate Professor)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন