বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ এই দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষই যার যার গল্পে সে একজন মহানায়ক। একজন দূর্নীতিবাজ জালিম তাঁর গল্পে সে একজন জনদরদী মহান নেতা। একজন দুশ্চরিত্র পুরুষ তাঁর গল্পে সে একজন মহান পুরুষ। একজন বাজারি পতিতাও তাঁর গল্পে সে একজন পুতপবিত্র মহিয়সী নারী। কিংবা দুর্ধর্ষ একজন খুনিও তাঁর নিজের গল্পে সে একজন সাহসী বীর। এই দুনিয়ার রঙ্গ মঞ্চে আমরা সবাই যার যার গল্পে একেকজন সুপার হিরো। আমাদের গল্পে আমারা কেউই খলনায়ক নই। ইনফ্যাক্ট, একজন খলনায়কও তার নিজের গল্পে সে একজন নিষ্পাপ মহান ব্যক্তি।
আমাদের গল্পে আমাদের কখনোই ভুল হওয়ার সুযোগ নেই। আর সেজন্যই আমরা যা করি তা বারবার করতে পারি এবং সে কাজের জন্য আমরা গর্ববোধও করি।
মানুষ কখনই নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করাতে পছন্দ করে না। মানুষ যদি নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে নিজের বিচার করতো তাহলে সে যা করে তা সে করতে পারতো না। একবার অন্যায় করলেই সে তাঁর কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হতো এবং সে আর সেই কাজটি দ্বিতীয়বার করতো না।
মানুষ নিজের কৃতকর্মের জন্য তখনই লজ্জিত হয় যখন সে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিজেকে বিচার করতে পারে।
মানুষ অন্যের দোষত্রুটি নিয়ে যতটা সময় ব্যয় করে সেই সময়টুকু যদি সে নিজের জন্য ব্যয় করতো তাহলে সে একজন ওলি আওলিয়া হয়ে যেতো। আমরা সারা জীবন ওলি আওলিয়াদের খোঁজ করি। আমরা যদি আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের ভুলত্রুটিগুলো আইডেন্টিফাই করতে পারতাম তাহলে ওলি আওলিয়াদের খোঁজে এখানে সেখানে দৌড়াতে হতো না। আমরা যদি অন্যের পিছনে তাঁদের দোষদ্রুটিগুলো নিয়ে গবেষণা না করে নিজের নিয়তির কথা চিন্তা করতাম এবং পরকালে নিজের পরিনতির কথা একটু স্মরণ করতাম তাহলে নিজেরাই একেকজন ওলি আওলিয়া হয়ে যেতাম।
আমরা যদি সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে পারতাম তাহলে মিথ্যার পিছনে ছুটে সময় নষ্ট করতাম না, জালিম-খুনি-দূর্নীতিবাজদেরক ে মাথায় তুলে নৃত্য করতাম না।
একজন জালিম-দূর্নীতিবাজ শাসক কিংবা ব্যক্তিকে সমর্থনের জন্য আমাদেরকে কতটা খেসারত দিতে হবে তা যদি বিন্দু পরিমানে বুঝার চেষ্টা করতাম তাহলে আমরা সেই জালিম-দূর্নীতিবাজ থেকে যোজন যোজন দূরে থাকতাম।
একজন মানুষ তখনই হারামের সাথে সখ্যতা গড়তে পারে যখন সে সৃষ্টিকর্তার দেয়া শাস্তির কথা ভুলে যায়, আর যখন একটি জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নিকট হারাম কাজ, হারাম বস্তু, হারাম খাবার স্বাভাবিক হয়ে যায় তখন সে জাতির উপর আল্লাহর গজব বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।
আমরা যখন বছরের পর বছর জুলুমের শিকার হই, জালিম শাসকের দ্বারা নির্যাতীত হই তখন অসহায়ের মতো শুধু উর্ধ্ব গগণের দিকে তাকিয়ে দৈব সাহায্যের প্রত্যাশায় থাকি। অথচ আমরা ভুলে যাই আমাদের উপর নির্যাতনের অন্যতম কারণই হলাম আমরা। আমাদের কৃতকর্মের শাস্তিস্বরূপ সৃষ্টিকর্তাই আমাদের জন্য জালিম শাসক নিয়োজিত করেন।
আমরা নিজেরাই জানি না কখন যে আমরা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুমের রাস্তা তৈরী করে ফেলি। আমাদের উপর নির্যাতনের জন্য আমরাই জালিম শাসকদের নির্বাচিত করি। তারপর যখন সেই নির্বাচিত শাসকই আমাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করতে থাকে তখন কিংকর্তব্যবিমূডঢ় হয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। শুধু তাই নয় নিজেরদের কৃতকর্মের কথা টোটালি ভুলে গিয়ে রাতারাতি ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য উর্ধ্বকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তো কোনো জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না যদি না তাঁরা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য স্বচেষ্ট হয়।
বাংলাদেশও সে নিয়মের ব্যতিক্রম নয়। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজেদেরকেই যুদ্ধে নামতে হবে। তবে যুদ্ধে যাবার আগে নিজেদেরকে যোগ্য যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, আল্লাহর রাস্তায় ফিরে আসতে হবে। তা না হলে যুদ্ধ শুরুর আগেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। বারবার জালিম দূর্নীতিবাজদের দ্বারা নির্মমভাবে নির্যাতিত হতে হবে।
কালেক্টেড
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন