* দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র শনিবারসহ ৬ দিন খোলা*

ইসলামী ব্যাংক দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র * সকল প্রকার একাউন্ট খুলতে * * টাকা জমা করতে * টাকা উঠাতে * * বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স এর টাকা বোনাসসহ উঠাতে * দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রে আসুন। * * দক্ষিণগাঁও শাহীবাগ বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র শনিবারসহ ৬ দিন খোলা* * প্রয়োজনে যোগাযোগ করুনঃ 01711-458151* 01700-925241*

বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২০

টুকরো গল্প : পিতাকে সন্তানের নসীহত: মোশাররফ হোসাইন সাগর

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ এ. কে. এম. বজলুর রহমান সেলিম একজন ইসলামী আদর্শের লেখক, কবি, গীতিকার ও নাট্যকার। তিনি অনেকগুলো ইসলামী গান লিখেছেন, তারমধ্যে নাতে রাসূলও আছে বেশ কয়েকটি। তিনি মাঝে মধ্যে সেই গানগুলো কম্পিউটারে নিজে শোনেন, ছোট মেয়েকেও কাছে ডেকে শুনতে বলেন। সেইসাথে মেয়েকে আরো বলে থাকেন--'দেখো, তোমার আব্বু কত সুন্দর সুন্দর নাতে রাসূল (সা) লিখেছে। শুনে প্রাণ ঠাণ্ডা করো আর রাসূলের আদর্শে নিজেকে গড়ে তোলো।'

সেলিম সাহেবের তিনটি মেয়ে, কোনো ছেলে নেই। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী মেয়েদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে দ্বীন-ঈমানদার মুত্তাকী পাত্রের হাতে তুলে দিলে জান্নাত লাভ করা যায়। সেই জান্নাত লাভের আশায়-ই সেলিম সাহেব তার জান্নাতের টিকিট মেয়ে তিনটিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত এবং দ্বীনদার ঈমানদার মুত্তাকী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী মহিলা কামিল মাদরাসায় পড়াচ্ছেন।

মেয়েদের এই মাদরাসায় পড়িয়েই তিনি পড়েছেন গ্যাঁড়াকলে। মেয়েরা এখন তার প্রতিটি কথা ও কাজকে কুরআন-হাদীসের কষ্টিপাথরে যাচাই-বাছাই করে মূল্যায়ন করে থাকে। এরমধ্যে ছোট মেয়েটাই বেশি সোচ্চার ও পিতার ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা করে। কারণ অন্যদু'টি মেয়ে পিতাকে কিছুটা ভয় পায় বলে পিতার অনেক ত্রুটি-বিচ্যূতি দেখে-শুনেও নীরব থাকে। কিন্তু ছোট মেয়ে তা নয়, আদর পেয়ে মাথায় চড়ে বসেছে।

ছোট মেয়েটা লেখাপড়ায় এবং অন্যান্য অনেক দিক দিয়ে ভালো হলেও একটা বদভ্যাস ওর রয়েছে। তাহলো পড়ার টেবিলকে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখে না। এলোমেলো করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখে বই-খাতা-কলম সব, যা দৃষ্টিকটু লাগে। এহেন অবস্থা দেখেই সেলিম সাহেব একদিন ছোট মেয়েকে কাছে ডেকে জোরে এক ধমক দিয়ে বললেন--'সুমী, আমি তোমাকে কতদিন না বলেছি পড়ার টেবিল সুন্দর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখবে! তা রাখোনি কেন? এখন মার দিবো একটা?'

তখন-ই ছোট মেয়ে সুমী রাগে পাল্টা ফুঁসে উঠে সেলিম সাহেবকে বলে--'এ্যাঁ! তিনি আমায় ধমক দেয়, বকা দেয়, মার দিতে চায়। তিনি আবার ইসলামী উপন্যাস লিখেন, গল্প লিখেন, নাটক লিখেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শানে 'না'ত' লিখেন। রাসূলের শানে না'ত লিখলেই হয় না, তাঁর আদর্শকে জানতে ও মানতে হয়, তাঁর মতো চরিত্রের অধিকারী হতে হয়।'

মেয়ে একটু থেমে দম নিয়ে আবার বলতে থাকে--'তিনি আমার আম্মুকেও ধমক দিয়ে কথা বলেন। কোনোদিন তরকারি একটু কম স্বাদ হলেই ধমক দিয়ে বলেন, এ কী রেঁধেছো, এটা মুখে দেয়া যায়! এত বয়স হলো, তিনটি সন্তানের মা হয়ে গেলে, এখন পর্যন্ত মহিলা ভালোভাবে তরকারি রান্নাটাও শিখতে পারলে না। ধিক তোমাকে!'

সেলিম সাহেব মেয়েকে কিছু বলেন না। তাকে মনখুলে সব কথা বলার সুযোগ দেন। কথা বলে মেয়ের মনের রাগ-ঝালটা একটু কমুক। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে মেয়ে বলতে থাকে--‌'আমরা না হয় আপনার নিজের মেয়ে, আমাদের যা খুশি বলেন, মেনে নিলাম। কিন্তু আমার আম্মু তো পরের মেয়ে, বিনা বেতনে আপনার ঘর-সংসার করছে, আমাদেরসহ আপনাকে রেঁধে-বেড়ে খাওয়াচ্ছে। তার জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া না জানিয়ে আপনি সেই পরের মেয়েকে বকাঝকা করেন কোন অধিকারে?'

সেলিম সাহেবকে চুপ থাকতে দেখে মেয়ের উৎসাহ যেন আরো বেড়ে যায়।পিতার মুখের দিকে বক্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আরো বলে--'আমাদের রাসূল (সা)-এর চরিত্র কেমন ছিল? তিনি কোনোদিন কারো সাথে দুর্ব্যবহার করেননি। জীবনে কোনোদিন কাউকে ধমক দিয়ে কথা বলেননি। এমনকি রাসূল (সা)-এর যারা খাদেম ছিল তারা শত ভুল করলেও তিনি 'উহু' শব্দটি উচ্চারণ করেননি। আব্বু, আপনি হয় রাসূল (সা)-এর আদর্শ মেনে চলুন, না হয় রাসূল (সা)-কে নিয়ে গান-কবিতা লেখা বন্ধ করুন। কথা ও কাজে গড়মিল থাকা চলবে না। এটা মুনাফিকীর লক্ষণ। যেমন আল্লাহ বলেছেন : হে ঈমানদারগণ, তোমরা সে কথা কেন বলো, যা তোমরা করো না। এটা তো আল্লাহর নিকট খুবই ক্রোধ উদ্রেককারী যে, তোমরা বলবে একটা, করবে আরেকটা।'
মেয়ের কথাগুলো সেলিম সাহেব এতক্ষণ স্তপ্ধ হয়ে শুনতেছিলেন। মেয়ের কোনো কথায় বাধা প্রদান বা প্রতিবাদ করেননি।

মেয়ে থামলেপরে তিনি মেয়ের উদ্দেশ্যে বললেন--'আমি তো রাসূল (সা)-এর আদর্শ মেনে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু সব ব্যাপারে হয়তো পারি না। তবে আমি তো ছোটবেলা থেকেই নামায পড়ি, রোযা করি। মাত্র বাইশ বছর বয়স থেকে রাসূল (সা)-এর অন্যতম সুন্নাত মুখে দাড়ি রেখেছি। সৎউপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আয়-উপার্জন করি। ঈদুল আযহায় কুরবানী দেই। সাধ্যমতো দান-সদকা ও গরীব আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্য-সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। আমি তোমাদের মতো মাদরাসায় না পড়লেও বাংলা ভাষায় লেখা কুরআনের তাফসীর ও অনেক হাদীসগ্রন্থ পড়েছি। ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা শত শত বই পড়েছি। কুরআন-হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য পড়ে যতটুকু জেনেছি-বুঝেছি প্রায় সব-ই মেনে চলার চেষ্টা করি। এটা কি রাসূল (সা)-এর আদর্শের অনুসরণ নয়। আর তোমরা আমার সব কথা মেনে চললে, তোমার আম্মু মজা করে তরকারি রান্না করলে তো আমার মেজাজটা খারাপ হয় না, আর আমার আচরণও রাসূল (সা)-এর আচরণের বিপরীত হয় না।'

সেলিম সাহেবের কথা শুনে মেয়ে উত্তরে বললো--'এটাই তো আপনার সবচেয়ে বড় দোষ, পান থেকে চুন খসলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, ক্রোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আপনার মধ্যে রাগ ও ক্রোধের মাত্রা অনেক বেশি। এটা দমন করতে না পারলে আপনি রাসূলের আদর্শের পূর্ণ অনুসারী হতে পারবেন না। আপনি হাদীসে পড়েননি রাসূল (সা)-এর সেই বাণীটি, তিনি বলেছেন : কুস্তিতে যে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে সে বীর নয়, নিজের ক্রোধকে যে দমন করতে পারে সে-ই প্রকৃত বীর।'

সেলিম সাহেব মেয়ের সাথে আর তর্কে লিপ্ত হলেন না। মনে মনে ভাবতে থাকলেন, মেয়ে যা বলছে তা তো তার বেলায় অনেকাংশেই সত্যি। আর পরকালে জান্নাত লাভের প্রত্যাশায় মেয়েদেরকে মাদরাসায় পড়িয়ে আলেম বানিয়ে তিনি তো ফাঁদে আটকে গেছেন। জান্নাত লাভ করতে হলে এ ফাঁদ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় নেই বুঝি। মুনাফিকীর দুর্নাম ঘুচিয়ে রাসূল (সা)-এর আদর্শের পূর্ণ অনুসারী ও স্ত্রী-সন্তানের নিকট ভালো হতে হলে নিজের চরিত্রে যা দোষ-ত্রুটি আছে একে একে তা সংশোধন করে নিতে হবে। হে আল্লাহ, আমায় তাওফীক দাও!
১৫. ১১. ২০

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পবিত্র ঈদ-উল-আযহা’র শুভেচ্ছা.

  বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ  প্রতিবছর ঈদ আসে আমাদের জীবনে আনন্দ আর সীমাহীন প্রেম প্রীতি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে। তাই এ দিন সকল কালিমা আর কলুষতাক...