বই : ইসলামের দৃষ্টিতে পোশাক পর্দা ও সাজসজ্জা
লেখক : ড. আহমদ আলী
প্রকাশনা : বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার
নির্ধারিত মূল্য : ১৮০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২৭২
রিভিউ লেখক :
Rashed Mohammad Zia
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বই পরিচিতি :
সমগ্র বিশ্বের মুসলিমরা ধর্মীয় দিক থেকে এক জাতি হলেও আমাদের মধ্যে রয়েছে বর্ণ, আচার -আচরণ ও অভ্যাসগত নানা ভিন্নতা ও পার্থক্য। জীবনযাত্রায় রয়েছে স্পষ্ট বৈচিত্র্য। ভাষা- উপভাষার দিক থেকেও রয়েছে পরিষ্কার প্রভেদ। তাই আমরা দেখি, একেক দেশের মুসলিম জনসাধারণের পোশাক ও সাজসজ্জার ধরণ একেকরকম। আরবীদের জাতীয় পোশাক জুব্বা আর পাকিস্তানের জাতীয় পোশাক পাজামা - পাঞ্জাবি। ইউরোপীয়ান মুসলিমরা সালাতের সময় টুপি খুব কমই পড়ে, অথচ আমরা টুপিবিহীন নামাজ পড়তে অনভ্যস্ত সে শৈশব থেকেই।
নানা দেশের মুসলিমদের জীবনযাপনে ও পোশাকাদিতে ভিন্নতা দেখে আমরা অনেকে কৌতূহলী হয়ে এই ধরণের পোশাক পরিধান ও সাজসজ্জার ব্যাপারে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি জানতে বিভিন্ন বইপত্র খুঁজতে থাকি। বাংলা ভাষায় নারী-পুরুষের শারীরিক সাজসজ্জা ও পোশাক পরিধানের উপর ছোটবড় বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে। আমি মনে করি, নারী পুরুষের দৈনন্দিন জীবনে পরিধেয় পোশাক ও শারীরিক প্রয়োজনীয় সাজসজ্জা' সম্পর্কে শর'ঈ বিশ্লেষণ জানতে হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শায়খ ড. আহমদ আলীর 'ইসলামের দৃষ্টিতে পোশাক, পর্দা ও সাজসজ্জা' বইটি যে কারো জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী হবে। প্রসঙ্গত এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, বাংলাভাষী পাঠকদের জন্য এ সম্পর্কিত উপকারী আরেকটা বই হল, ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) এর রচিত 'কুরআন-সুন্নাহর আলোকে পোশাক, পর্দা ও দেহ-সজ্জা' বইটি।
বইয়ের ভিতরবাহির :
রুচিসম্মত প্রচ্ছদ, মজবুত বাঁধাই, উন্নত কাগজ' ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার ভেতরগত পরিধির পৃথক অবস্থানের কারণে বইটি দেখতে ও স্পর্শ করতেও মনে আনন্দ অনুভব হয়।
বিজ্ঞ লেখক ড. আহমদ আলী তাঁর এ বইটি মোট ৮টি অধ্যায়ের অধীনে বিন্যস্ত করেছেন। পাঠকদের জানার সুবিধার্থে আমি অধ্যায়সমূহের শিরোনাম এখানে উল্লেখ করছি।
১. পোশাকের মূলনীতি, বিভিন্ন বস্ত্র ও রঙ
২. পুরুষদের পোশাক
৩. পুরুষদের সাজসজ্জা
৪. নারী - পুরুষের সাতর ( লজ্জাস্থান)
৫. পর্দা কী, কেন ও কীভাবে
৬. মহিলাদের পোশাক
৭. মহিলাদের সৌন্দর্য ও রূপচর্চা
৮. মহিলাদের অলঙ্কার ব্যবহার
উপরিউক্ত প্রতিটি অধ্যায়ের অধীনে শিরোনামের সাথে সাদৃশ্য রেখে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নির্ভরযোগ্য বর্ণনানুযায়ী আদ্যোপান্ত আলোচনা লেখক অত্যন্ত চমৎকারিত্বের সাথে উপস্থাপন করেছেন। বর্তমান আমাদের সমাজে এবং দেশে ও বিদেশে প্রচলিত মুসলিম নারী - পুরুষের পোশাক ও স্বাভাবিক সাজসজ্জা সম্পর্কিত খুঁটিনাটি সব মৌলিক আলোচনা তিনি এখানে নিয়ে এসেছেন। তাই আমি মনে করি, সময়োপযোগী এ বইটি বাংলাভাষী প্রতিটি মুসলিম পরিবারের সংগ্রহে থাকা প্রয়োজন।
বইটি কেন সবার জন্য প্রয়োজন :
আমরা মুসলিম হিসেবে জীবনের প্রতিটি বিষয়কে দ্বীনি রঙ্গে রঙ্গিন রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তাই পোশাক এবং সাজসজ্জাও ইসলামী নিয়মেই আমরা অনুসরণ করতে পছন্দ করি। কিন্তু এক্ষেত্রে অনেকে গোঁড়ামিপূর্ণ আবার কেউ কেউ সীমালঙ্ঘনপূর্ণ মনোভাব লালন করি। যার উভয়টিই ক্ষতিকর। ইসলামী পোশাকের মূলনীতি সম্পর্কে লেখক খুবই চমৎকার বলেছেন ; "বস্তুত ইসলামী শারী'আত মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য কোন পোশাক নির্দিষ্ট করে দেয়নি। সাতর ঢাকার জন্য কতকগুলো শর্ত ও সীমারেখা দিয়ে দিয়েছে। এগুলো মেনে চলে দেশ, কাল, পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুযায়ী এক বিস্তৃত আওতা পর্যন্ত যে কোন পোশাকই ইসলামে জায়িজ। পোশাক প্রশ্নে অজ্ঞতা, চাপানো বুজরুকি ও অন্ধ অনুকরণ ইত্যাদির বাইরে গিয়ে কেবল শারী'আতের সীমায় থাকা এবং এর প্রশস্ত দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহণ করাই সমগ্র পৃথিবীর মুসলিমদের কর্তব্য"। ( পৃষ্ঠা, ১৫)
বইটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য :
ইসলামী শারী'আতের মূল উৎস কুরআন ও হাদীসের আলোকে সম্মানিত লেখক আধুনিক সমাজে প্রচলিত নানা ধরণের পোশাক ও সাজসজ্জা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা উপস্থিত করেছেন। বিশেষ করে পাশ্চাত্য সভ্যতার নোংরা প্রভাবের কারণে কিছু কিছু মুসলিম দেশেও শরীয়া' বিরোধী যে সকল পোশাক ও সাজসজ্জা গ্রহণের প্রবণতা মুসলিম যুব ও যুবতী সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে তার ব্যবচ্ছেদ করার কারণে এ বইটির গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণ বেড়ে গেছে।
নারী - পুরুষ, যুবক-প্রৌঢ় সকলের জন্য বইটি প্রয়োজন :
আমরা জানি, বর্তমানে যুবসমাজ চু্ল ও দাড়ি- মোচ নিয়ে বহু ধরণের কৃত্রিম সাজসজ্জা গ্রহণ করে, যার বেশীরভাগই শারী'আত সমর্থন করেনা। এবং ইদানীং উঠতিবয়সী ও উচ্চবিলাসী মুসলিম যুবতীরাও তাদের চুল, জুলফি, ভ্রূ, চেহেরা, নাক, দাত ইত্যাদি নিয়ে বহু রকমের পরিবর্তনমূ্লক সাজসজ্জা গ্রহণ করছে, যেগুলোর অধিকাংশই শারী'আত বিবর্জিত ও দ্বীন পরিপন্থী। আবার মুসলিম সমাজে বয়স্ক নারীর পর্দা নিয়ে নানা ধোঁয়াশা প্রচলিত আছে। পুরুষরা বয়সকালীন শারীরিক অনুভূতিজাত যে সকল পরিবর্তনের শিকার হয় সেটার শর'ঈ দিক সম্পর্কেও আমাদের ভিতর বিভিন্ন অজ্ঞতার অস্তিত্ব রয়েছে। সর্বোপরি, দৈনন্দিন জীবনে নারী-পুরুষের পোশাক, পর্দা ও সাজসজ্জা সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে হলে এটি একটি দারুণ উপকারি বই।
বইটি বাসায় থাকলে যে উপকার পাবেন :
আপনার পরিবারে নিশ্চয়ই পুরুষরা নানা রকম পোশাক পরিধান করে থাকে। কেউ পাঞ্জাবি, কেউ প্যান্ট -শার্ট, কেউ জুব্বা, কেউ গেঞ্জি - ট্রাউজার ইত্যাদি। ঘরেবাইরে পরিহিত এসব পোশাক সম্পর্কে শরীয়া'র দৃষ্টিভঙ্গি আপনার জানা থাকবে, যদি বইটি আপনি নিয়মিত অধ্যয়নে রাখেন। অন্যদিকে আমাদের পরিবারের নারীরা ঘরেবাইরে যে সকল পোশাক পরিধানে অভ্যস্ত, অবস্থা, কাল ভেদে সেগুলো সম্পর্কে শর'ঈ দৃষ্টিভঙ্গি জানা থাকা পরিবারের প্রত্যেকের উচিত। কারণ যে পরিবারের নারীরা শর'ঈ পর্দা মেনে চলেনা সে পরিবারের পুরুষ অভিভাবকদের ব্যাপারে হাদিসে যথেষ্ট নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে।
বিশুদ্ধ হাদিসের উপস্থিতি :
নির্ভরযোগ্য হাদিসের রেফারেন্স যেকোন বিষয়ের গ্রহণযোগ্যতা অধিকতর বৃদ্ধি করে দেয়। কারণ কুরআনের পর হাদিসই শারী'আতের মূল উৎস। সম্মানিত লেখক বইটির বিভিন্ন স্থানে প্রসঙ্গক্রমে বহু হাদিস উল্লেখ করেছেন। সিহাহ সিত্তাহর প্রায় প্রতিটি হাদিসগ্রন্থ থেকে হাদিসের বর্ণনা এনেছেন। তাই এখানে বুখারী- মুসলিমের হাদিস যেমন রয়েছে, তেমনিভাবে সুনানুন নাসায়ী ও সুনানু ইবনি মাজাহ'র হাদিসও রয়েছে।
আধুনিক জার্নাল - ম্যাগাজিন থেকে তথ্য সংগ্রহ :
সম্মানিত লেখক প্রতিটি বিষয়ের সামগ্রিক ইতি ও নেতিবাচক দিক উল্লেখ করার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় স্থানে আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের নানা তথ্য উপস্থাপন করে একজন মুসলিমের পোশাকাদি এবং বিশেষকরে দেহ ও সাজসজ্জার ক্ষেত্রে উপকারিতা ও অপকারিতার বিষয়েও অত্যন্ত চমৎকার আলোচনা তুলে ধরেছেন।
আশা করি, বইটি ঢাকা ও চট্টগ্রামের যেকোন অভিজাত ও ইসলামী বইপত্রের সংগ্রাহক প্রসিদ্ধ লাইব্রেরিগুলোতে পাওয়া যাবে। আর বিশেষ প্রয়োজনে সংগ্রহ করতে চায়লে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
মহান আল্লাহ তা'য়ালা বইটির লেখক, প্রকাশক, প্রচারক ও বিজ্ঞ পাঠকসমাজের প্রত্যেককে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন, আমীন।